পেনশন উত্তরাধিকার: নতুন নিয়মে কি বিপদ?

যুক্তরাজ্যে (UK) উত্তরাধিকার করের (Inheritance Tax) নতুন নিয়ম: আপনার জন্য এর অর্থ কি?

যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন এমন অনেকের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, আগামী এপ্রিল মাস থেকে তাদের উত্তরাধিকার করের নিয়মে পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তনের ফলে এখন থেকে ব্যক্তিগত পেনশন স্কিমগুলোও উত্তরাধিকার করের আওতায় আসবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেকের উত্তরাধিকারের (সম্পত্তি) ওপর করের বোঝা বাড়তে পারে।

বর্তমানে, যুক্তরাজ্যের আইনে উত্তরাধিকার করের হিসাবের সময় সাধারণত পেনশন স্কিমগুলোকে বিবেচনায় আনা হয় না। তবে, ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালের শরৎকালে, রেচেল রিভস ঘোষণা করেন যে, এপ্রিল ২০২৭ সাল থেকে ডেফাইনড কন্ট্রিবিউশন (defined contribution) পেনশন, যা সাধারণত ব্যক্তিগত পেনশন হিসেবে পরিচিত, তা উত্তরাধিকার করের আওতায় আনা হবে। এই পরিবর্তনের মূল কারণ হলো, সরকার চাচ্ছে যাদের বেশি সম্পদ রয়েছে, তারা যেন তাদের উত্তরাধিকারের ওপর আরো বেশি কর প্রদান করেন।

ডেফাইনড কন্ট্রিবিউশন পেনশন স্কিম বলতে বোঝায় এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে কর্মীরা তাদের অবসর গ্রহণের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা করেন। এই স্কিমগুলি সাধারণত কর্মীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হয়। পরিবর্তনের ফলে, যদি কোনো ব্যক্তির পেনশন ফান্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ জমা থাকে এবং তিনি সেটি ব্যবহার না করে মারা যান, তবে সেই অব্যবহৃত অর্থ উত্তরাধিকার করের আওতায় আসবে। এই করের হার হতে পারে ৪০ শতাংশ। বর্তমানে, এই করমুক্ত সীমা ৩ লাখ ২৫ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড (GBP)।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই পরিবর্তনের ফলে খুব বেশি সংখ্যক মানুষের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে না। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৭-২৮ অর্থবছরে প্রায় ২ লক্ষ ১৩ হাজার এস্টেটের মধ্যে ১০,৫০০ টির মতো (প্রায় ৫%) প্রথম বারের মতো উত্তরাধিকার করের আওতায় আসবে। এছাড়া, প্রায় ৩৮,৫০০ এস্টেটকে আগের চেয়ে বেশি কর দিতে হতে পারে। তবে, সরকার এটাও জানিয়েছে যে, এই হিসাবের মধ্যে মানুষজন কিভাবে তাদের পেনশন ব্যবহার করেন, সেই ধরনের সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলো বিবেচনা করা হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে, কিছু মানুষ এখন থেকেই তাদের পেনশন ফান্ড থেকে বেশি পরিমাণে অর্থ উত্তোলন করার কথা ভাবছেন। এর কারণ হলো, তারা চান জীবিত থাকাকালীন এই অর্থ উপভোগ করতে, যাতে মৃত্যুর পরে তাদের উত্তরাধিকারের ওপর বেশি করের বোঝা চাপানো না হয়। কেউ কেউ আবার তাদের সন্তানদের বাড়ি কিনতে সাহায্য করার জন্য কিছু অর্থ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

এই পরিবর্তনের ফলে, অ্যানুইটি (annuity) নামে পরিচিত একটি পেনশন-সংক্রান্ত পণ্যের চাহিদা ভবিষ্যতে বাড়তে পারে। অ্যানুইটি হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যা নিশ্চিত করে যে আপনি অবসর জীবনে নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাবেন। এছাড়াও, যারা তাদের সম্পত্তির ওপর উত্তরাধিকার করের বোঝা কমাতে চান, তারা বন্ধকী ঋণ (equity release mortgage) নেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন। এটি মূলত ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য তাদের সম্পত্তি থেকে নগদ অর্থ তোলার একটি উপায়, যার মাধ্যমে তারা তাদের সম্পত্তির মূল্য কমাতে পারেন।

এখন প্রশ্ন হলো, এই পরিবর্তনের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্ক কী? সরাসরি যুক্তরাজ্যের এই আইন বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর প্রভাব ফেলবে না, তবে এটি একটি বৈশ্বিক আর্থিক প্রবণতার অংশ, যা আমাদের সচেতন থাকতে সাহায্য করে। আমাদের দেশেও উত্তরাধিকার পরিকল্পনা এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষ করে, যাদের পরিবার যুক্তরাজ্যে রয়েছে বা যারা যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ করেন, তাদের জন্য এই খবরটি গুরুত্বপূর্ণ।

উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক, ৭০ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি, যিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন এবং তার একটি ব্যক্তিগত পেনশন স্কিমে প্রায় ৭ লক্ষ ব্রিটিশ পাউন্ড (GBP) জমা আছে। এছাড়া তার অন্যান্য সম্পদের মূল্য প্রায় ৮ লক্ষ ব্রিটিশ পাউন্ড। যদি তিনি তার পেনশন থেকে কোনো অর্থ ব্যবহার না করে মারা যান, তবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী, তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫ লক্ষ ব্রিটিশ পাউন্ড (প্রায় ২০ কোটি ৬১ লক্ষ বাংলাদেশি টাকা, যেখানে ১ GBP = ১৩৭.৪১ BDT)। এই ক্ষেত্রে, উত্তরাধিকার করের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে।

উপসংহারে বলা যায়, যুক্তরাজ্যের উত্তরাধিকার করের এই পরিবর্তন সম্ভবত আমাদের দেশের মানুষের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে না, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক পরিবর্তনের উদাহরণ। আমাদের নিজেদের সম্পদ এবং উত্তরাধিকার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। এটি আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য একটি ভালো প্রস্তুতি হতে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *