শিরোনাম: পোষা প্রাণীর দীর্ঘ জীবন: বিজ্ঞান কি পারবে আমাদের বন্ধুদের আরও বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখতে?
বাংলাদেশে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে, মানুষের মধ্যে পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা বাড়ছে। কুকুর, বিড়ালসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী এখন অনেকের পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তাদের স্বাস্থ্য ও ভালো থাকার বিষয়টিও তাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীদের নতুন কিছু গবেষণা সামনে এসেছে, যা আমাদের প্রিয় পোষা প্রাণীগুলোর জীবনকাল বাড়ানোর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি বায়োটেক কোম্পানি ‘লোয়াল’ (Loyal) কাজ করছে এমন কিছু ওষুধ তৈরির জন্য যা কুকুরের জীবনকাল বাড়াতে পারে। তাদের গবেষণার মূল ভিত্তি হলো, বড় আকারের কুকুরের তুলনায় ছোট আকারের কুকুররা সাধারণত বেশি দিন বাঁচে।
উদাহরণস্বরূপ, নিউফাউন্ডল্যান্ড জাতের কুকুর গড়ে ৮ থেকে ১০ বছর বাঁচে, যেখানে চিহুয়াহুয়া ১৫ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। ‘লোয়াল’ -এর বিজ্ঞানীরা IGF-1 নামক একটি হরমোনের উৎপাদন কমানোর চেষ্টা করছেন, যা বড় আকারের কুকুরের শরীরে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় এবং তাদের বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
এই গবেষণা সফল হলে, এটি শুধু কুকুরের জীবনকালই বাড়াবে না, বরং বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করতে পারে।
তবে, শুধু ওষুধই নয়, পোষা প্রাণীদের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য আরও অনেক বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য এবং ব্যায়ামের সঠিক ব্যবস্থাপনা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
উদাহরণস্বরূপ, খাদ্যের ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ করে ল্যাব্রাডর প্রজাতির কুকুরের জীবনকাল ১৫% পর্যন্ত বাড়ানো গেছে। এছাড়া, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যও গুরুত্বপূর্ণ।
খেলাধুলা ও ভালোবাসাপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা তাদের ভালো থাকতে সাহায্য করে।
এই বিষয়ে অভিজ্ঞ পশুচিকিৎসক ও গবেষকদের পরামর্শ হলো, পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে তাদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে।
এছাড়াও, তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে, বাজারে পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্য ও জীবনকাল বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়।
তবে, এইসব সাপ্লিমেন্ট ব্যবহারের আগে অবশ্যই পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পোষা প্রাণীদের জীবনকাল বাড়ানোর চেষ্টা একদিকে যেমন আনন্দের, তেমনি কিছু নৈতিক প্রশ্নও জড়িত।
অতিরিক্ত জীবনকাল তাদের জন্য কতটা উপকারী হবে, নাকি এটি শুধু মালিকের ইচ্ছাপূরণ? এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।
তবে, এটা নিশ্চিত যে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে পোষা প্রাণীদের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান