শিরোনাম: মস্তিষ্কের আঘাত থেকে ফিরে আসা: সঙ্গীতের শক্তিতে জীবন খুঁজে পাওয়া
ক্লেমেনসি বার্টন-হিল, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন ব্রিটিশ শিল্পী। তিনি একাধারে সাংবাদিক, ব্রডকাস্টার, বেহালাবাদক এবং লেখক হিসেবে পরিচিত। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের শিকার হন তিনি। এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে কিভাবে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন, সেই গল্প নিয়েই বিবিসি-তে নির্মিত হয়েছে একটি তথ্যচিত্র, যার নাম ‘মাই ব্রেইন: আফটার দ্য রাপচার’।
ক্লেমেনসি বার্টন-হিলের জন্ম লন্ডনে, বেড়ে ওঠা তাঁর মা, যিনি একজন কাস্টিং ডিরেক্টর, এবং দুই সৎ ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে একজন বেহালাবাদক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। এছাড়াও অভিনয়, পাঁচটি বই লেখা এবং বিবিসি-র হয়ে ক্ল্যাসিকাল মিউজিক বিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মতো কাজ করেছেন।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পর তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তথ্যচিত্রটিতে তাঁর এই কঠিন পরিস্থিতি এবং সেরে ওঠার সংগ্রামের কথা তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে তিনি তাঁর স্বামী জেমস রসকো এবং দুই ছেলে টোমাস ও জো-কে নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাস করেন।
বার্টন-হিলের ভাষায়, তথ্যচিত্রটি তাঁর জীবনের একটি ‘ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের’ প্রতিচ্ছবি। তিনি বলেন, “আমি সবসময় চেয়েছি, যারা মস্তিষ্কের আঘাতের শিকার হয়েছেন, তাঁদের জন্য কিছু করতে। কারণ, আমাদের ভবিষ্যৎ কী, তা আমরা কেউই জানি না।”
তথ্যচিত্রে তাঁর জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, “আমার সঙ্গে যা ঘটেছে, তা খুবই বিরল, আকস্মিক এবং অদ্ভুত। তবে জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। পাঁচ বছর বা পাঁচ মিনিটের মধ্যে কী ঘটবে, তা আমরা জানি না।”
বার্টন-হিল তাঁর অতীতের উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন। রেডিও এবং টিভিতে সবসময় হাসিখুশি দেখালেও, ভেতরে ভেতরে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন। তাঁর ভাষায়, লাইভ টিভি ছিল তাঁর নিরাপদ আশ্রয়। তিনি বলেন, “আমি সবসময় মনে করতাম, আমি তেমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নই।”
বার্টন-হিলের বাবা হামফ্রে বার্টন ছিলেন বিবিসির প্রথম সঙ্গীত ও শিল্পকলার প্রধান। যদিও তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক তেমন ভালো ছিল না, তিনি মনে করেন, বাবার কাছ থেকে পাওয়া কিছু জিন তাঁর মধ্যে কাজ করেছে।
সঙ্গীতের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার কথা উল্লেখ করে বার্টন-হিল বলেন, ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতের পাশাপাশি নব্বই দশকের হিপ-হপ, ড্রাম অ্যান্ড ব্যাস এবং গ্যারেজ ঘরানার গান তাঁর খুব প্রিয়। তিনি মনে করেন, সঙ্গীত এমন একটি মাধ্যম, যা শব্দ যেখানে পৌঁছাতে পারে না, সেখানে পৌঁছে যায়।
আর্সেনাল ফুটবল ক্লাবের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, খেলাধুলার উত্থান-পতন তাঁকে অনেক শান্তি দেয়। তিনি বিশেষভাবে আর্সেন ওয়েঙ্গার, টনি অ্যাডামস এবং ইয়ান রাইটের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, কারণ তাঁরা হাসপাতালে থাকাকালীন তাঁকে অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও পাঠিয়েছিলেন।
বার্টন-হিল মনে করেন, সঙ্গীত মানুষের জীবনকে বাঁচাতে পারে। তিনি বলেন, “আমি সবসময় বলতাম, সঙ্গীত ছাড়া আমি বাঁচতে পারি না। এখন, আমার আরোগ্য লাভের পর আমি বলতে পারি, সঙ্গীত জীবন বাঁচাতে পারে।” তাঁর মতে, শিল্পকলা, বিশেষ করে সঙ্গীত, আমাদের ভেতরের গভীর অনুভূতিকে নাড়া দেয়।
ক্লেমেনসি বার্টন-হিলের জীবনযুদ্ধ আমাদের সকলের জন্য এক অনুপ্রেরণা। তাঁর এই নতুন তথ্যচিত্রটি শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই নয়, বরং সঙ্গীত এবং শিল্পের শক্তি সম্পর্কেও আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান