জায়ান ন্যাশনাল পার্কের হোটেলে: প্রকৃতির মাঝে এক রাত!

শিরোনাম: জিয়ন ন্যাশনাল পার্ক লজ: আমেরিকার এক মনোমুগ্ধকর আশ্রমে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

আমেরিকার উটাহ অঙ্গরাজ্যের জিয়ন ন্যাশনাল পার্ক, যেখানে প্রকৃতির এক অপরূপ রূপ বিদ্যমান। পাহাড় আর উপত্যকার মাঝে অবস্থিত এই পার্কটিতে পর্যটকদের থাকার জন্য একমাত্র হোটেল হলো জিয়ন ন্যাশনাল পার্ক লজ। যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন এবং কোলাহলমুক্ত পরিবেশে কয়েকটা দিন কাটাতে চান, তাদের জন্য এই লজটি একটি আদর্শ স্থান।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে জানা যায়, এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দা ছিল স্থানীয় আমেরিকান উপজাতিরা। পরবর্তীতে, উনিশ শতকের শেষের দিকে এখানে আসেন মরমন সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে মুগ্ধ হয়ে তারা এই স্থানটির নাম দেন ‘জিয়ন’, যার হিব্রু অর্থ হলো ‘আশ্রয়স্থল’ বা ‘স্বর্গ’। ১৯১৯ সালে এটি একটি জাতীয় উদ্যান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং ১৯২৫ সালে জনসাধারণের জন্য জিয়ন ন্যাশনাল পার্ক লজ খোলা হয়।

লজের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেই একটি পাহাড়ী কুটির বা স্কি লজের মতো অনুভূতি পাওয়া যায়। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কক্ষ, যার মধ্যে আছে সাধারণ কক্ষ, স্যুট এবং ঐতিহাসিক কটেজ। প্রতিটি কক্ষে আধুনিক সব সুবিধা বিদ্যমান, যেমন স্যাটেলাইট টিভি, ওয়াইফাই, আরামদায়ক বিছানা এবং ব্যক্তিগত বাথরুম। তবে কটেজগুলোতে টিভি বা ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি কক্ষে বারান্দা বা আলাদা স্থান রয়েছে, যেখানে বসে প্রকৃতির শোভা উপভোগ করা যেতে পারে।

খাবার ও পানীয়ের জন্য লজে আছে দুটি রেস্টুরেন্ট এবং একটি বিয়ার গার্ডেন। এখানে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারের সুব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া, ক্যাসেল ডোম ক্যাফেতে হালকা খাবার পাওয়া যায়।

জিয়ন ন্যাশনাল পার্কে প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটানোর অসংখ্য সুযোগ রয়েছে। এখানে হাইকিং বা ট্রেকিংয়ের মতো কার্যকলাপের সুযোগ আছে, যা ভ্রমণকারীদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ। যারা একটু বেশি দুঃসাহসী, তারা এখানকার অ্যাঞ্জেলস ল্যান্ডিং ট্রেইলে হাইকিং করতে পারেন, তবে এর জন্য আগে থেকে অনুমতি নিতে হয়। এছাড়াও, ই-বাইক রাইডিংয়ের মাধ্যমে পার্কের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যেতে পারে।

পরিবার-বান্ধব সুযোগ-সুবিধার দিক থেকেও জিয়ন ন্যাশনাল পার্ক লজ বেশ এগিয়ে। এখানে পরিবারগুলোর জন্য সংযুক্ত কক্ষ ও স্যুট উপলব্ধ। শিশুদের জন্য বিনামূল্যে কটস এবং অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা রয়েছে। লজের উপহারের দোকানে স্থানীয় হস্তশিল্প, গহনা, বই, গেম এবং পোশাক পাওয়া যায়।

যারা পরিবেশ সচেতন, তাদের জন্য সুখবর হলো, জিয়ন ন্যাশনাল পার্ক লজ পরিবেশ সুরক্ষায় বেশ সক্রিয়। এখানে বর্জ্য হ্রাস, জল সংরক্ষণ এবং পরিবেশের উপর প্রভাব কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পার্কের ভেতরে চলাচল করার জন্য পরিবেশ-বান্ধব, বিদ্যুচ্চালিত শাটল বাসের ব্যবস্থা আছে, যা বিশেষভাবে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য উপযুক্ত।

জিয়ন ন্যাশনাল পার্ক লজে থাকার মূল সুবিধা হলো, এটি পার্কের ভেতরে অবস্থিত। এর ফলে, দর্শনার্থীরা পার্কের আকর্ষণীয় স্থানগুলোতে সহজেই যেতে পারেন এবং প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে পারেন। লজের বাইরে, কাছাকাছি স্প্রিংডেল শহরে কেনাকাটা এবং খাবারের আরও অনেক বিকল্প রয়েছে।

জিয়ন ন্যাশনাল পার্ক লজে থাকার খরচ, অন্যান্য হোটেলের তুলনায় তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। সাধারণত, একটি রাতের জন্য প্রায় ২৫৭ মার্কিন ডলার খরচ হতে পারে, যা বাংলাদেশি টাকায় (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী) প্রায় ২৮,০০০ টাকার সমান।

জিয়ন ন্যাশনাল পার্ক লজ, প্রকৃতির মাঝে শান্ত ও আরামদায়ক একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দিতে পারে। যারা আমেরিকার এই সুন্দর পার্কে ঘুরতে যেতে চান, তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার গন্তব্য হতে পারে।

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *