তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলের মেয়র এবং প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ একরেম ইমামোগলুকে দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনা তুরস্কের রাজনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে এবং দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করার পর তুরস্কে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ সমাবেশগুলোর একটি।
ইমামোগলুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, ঘুষ গ্রহণ, চাঁদাবাজি, ব্যক্তিগত তথ্যের অবৈধ রেকর্ড রাখা এবং দরপত্র প্রক্রিয়ায় কারচুপি করা। যদিও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বিরোধী দল এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছে, তাদের মতে এর মূল লক্ষ্য হলো ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে ইমামোগলুকে দূরে রাখা।
ইমামোগলুর আটকের প্রতিবাদে তুরস্কজুড়ে প্রতিবাদ-সমাবেশ হয়েছে। ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা এবং ইজমিরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়, যেখানে জলকামান, টিয়ার গ্যাস এবং পেপার স্প্রে ব্যবহার করা হয়।
এই পরিস্থিতিতে, বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)-র ১৫ লক্ষাধিক সদস্য তাদের মেয়রকে সমর্থন জানিয়েছেন।
সিএইচপি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা একটি প্রাথমিক নির্বাচনের মাধ্যমে ইমামোগলুকে দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করবে। দলের সদস্য না হয়েও অনেকেই এই নির্বাচনে তাদের সমর্থন জানাতে “সংহতি ভোট” দিয়েছেন।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় কাউন্সিল। সংস্থাটির পক্ষ থেকে ইমামোগলুকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। তুরস্কের অভ্যন্তরেও অনেকে এই গ্রেপ্তারের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
আঙ্কারার মেয়র মনসুর ইয়াস বলেছেন, “আমরা আমাদের আইনি ব্যবস্থার প্রতি লজ্জিত।” তিনি আরও বলেন, আইনজীবীরাও মামলার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারেননি, যা প্রমাণ করে যে এই পুরো প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ইমামোগলুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করতে বদ্ধপরিকর। কারণ বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা গেছে, ইমামোগলু নির্বাচনে এরদোয়ানের চেয়ে এগিয়ে আছেন।
ইমামোগলুর বিরুদ্ধে আগেও বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলা ছিল। এমনকি, তার একটি বিশ্ববিদ্যালয় সনদও বাতিল করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ইমামোগলু ২০১৯ সালে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন, যা এরদোয়ানের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। কারণ এর আগে ২৫ বছর ধরে এই শহরের নিয়ন্ত্রণ ছিল এরদোয়ানের দলের হাতে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস