গাজায় মৃত্যুর মিছিল: ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে নিহত ৫০,০০০ ছাড়াল!

গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৫০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রবিবার মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায় আরও ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এখনো চলছে এবং এর কোনো সমাপ্তি দেখা যাচ্ছে না।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করার সময় হামাস যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না। তবে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের মতে, নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ চাপা পরে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, তাই প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েল গাজায় হামলা জোরদার করেছে। এর আগে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ছিল। মঙ্গলবার ইসরায়েলের বিমান হামলায় ফিলিস্তিনিদের জন্য যুদ্ধ শুরুর পর থেকে একদিনে এটি ছিলো সবচেয়ে ভয়াবহ দিন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই দিন ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছিলেন ৪০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি। বুধবার থেকে গাজায় স্থল অভিযানও শুরু করেছে ইসরায়েল।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামাসের হামলায় প্রায় ২৫১ জন ইসরায়েলি নাগরিককে জিম্মি করা হয়।

হামাস এই হামলাকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির “নতুন ও বিপজ্জনক লঙ্ঘন” হিসেবে বর্ণনা করেছে। যদিও হামাস জানিয়েছে, তারা জানুয়ারিতে ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে এখনো অবিচল রয়েছে। তবে, গত বৃহস্পতিবার তারা যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েলে প্রথম রকেট নিক্ষেপ করে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। গাজার বাসিন্দাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, জিম্মিদের ফেরত না দিলে এবং হামাস যদি গাজায় ক্ষমতা ধরে রাখে, তাহলে গাজার বাসিন্দাদের চরম মূল্য দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, “জিম্মিদের ফেরত দিন এবং হামাসকে নির্মূল করুন, তাহলে আপনাদের জন্য বিশ্বের অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। অন্যথায়, ধ্বংস অনিবার্য।”

গত মঙ্গলবার এক টেলিভিশন ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, “আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই: এটা কেবল শুরু।”

গাজার প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সেখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাসপাতালগুলো প্রায়ই যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। ইসরায়েল সাহায্য প্রবেশে বাধা দেওয়ায় এবং সর্বশেষ অভিযানের কারণে খাদ্য বিতরণ ব্যাহত হওয়ায় গাজায় মানবিক সংকট ও দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।

যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর আলোচনা কার্যত ভেস্তে গেছে। হামাস জানুয়ারিতে ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির কাঠামোতে অটল থাকতে চাইছে। এই চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে ইসরায়েলের গাজা থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যাওয়ার কথা ছিল এবং যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি ঘোষণা করার কথা ছিল। এর বিনিময়ে হামাসের সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায় আর হয়নি। ইসরায়েল বলছে, হামাস যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া দুটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ইসরায়েলি সেনা ও সম্প্রদায়ের ক্ষতি করার হুমকি দিয়েছে, যার ফলস্বরূপ তারা গাজায় আক্রমণ জোরদার করেছে।

ইসরায়েল স্বীকার করে যে গাজায় তাদের যুদ্ধে বহু ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। তবে তারা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া পরিসংখ্যান অতিরঞ্জিত এবং হামাস বেসামরিক নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।

জাতিসংঘ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বারবার বলেছে, তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া পরিসংখ্যানকে সঠিক বলে মনে করে। এছাড়া, স্বাধীন গবেষণাগুলোতেও মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *