দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো বিলি মঙ্গারের অদম্য জয়, বিশ্ব রেকর্ড গড়ে তাক লাগালেন!

ফর্মুলা ওয়ানের জগৎ থেকে উঠে আসা এক অদম্য তারকার নাম বিলি মঙ্গার। ২০১৭ সালে এক ভয়াবহ মোটর রেসিং দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো এই ব্রিটিশ তরুণ, শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে একের পর এক কীর্তি স্থাপন করেছেন।

সম্প্রতি, তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিত ‘আয়রনম্যান’ খেতাব অর্জন করেছেন, যা প্রমাণ করে দিয়েছে, ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনো কিছুই মানুষের কাছে দুঃসাধ্য নয়।

বিলি মঙ্গারের জীবনের গল্প শুরু হয়েছিল রেসিং ট্র্যাক থেকে। ছোটবেলা থেকেই তার বাবার উৎসাহে কার্ট রেসিংয়ে নাম লেখান তিনি।

খুব অল্প বয়সেই তিনি খ্যাতি অর্জন করেন এবং ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু, তার এই স্বপ্নযাত্রায় হঠাৎই ছন্দপতন ঘটে।

ডন common park-এ এক রেসিং প্রতিযোগিতায় মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। মারাত্মক এই দুর্ঘটনায় তার দুটি পা-ই কেটে ফেলতে হয়।

দুর্ঘটনার পর বিলি মঙ্গারের জীবন সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে তাকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে।

কিন্তু, তিনি হার মানেননি। দুর্ঘটনার ১১ মাসের মধ্যেই তিনি বিশেষভাবে তৈরি করা একটি গাড়িতে চড়ে ব্রিটিশ ফর্মুলা থ্রি চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেন।

এরপর, তিনি খেলাধুলা ও বিনোদন জগতে নিজেকে আরও বিস্তৃত করেছেন।

২০২১ সালে, বিলি মঙ্গার দাতব্য সংস্থা ‘কমেডি রিলিফ’-এর হয়ে ১৪০ মাইল পথ হেঁটে, সাইকেল চালিয়ে এবং কায়াকিং করে প্রায় ৩০ লক্ষ পাউন্ড সংগ্রহ করেন।

এছাড়াও, তিনি ‘সেলিব্রিটি রেস অ্যাক্রস দ্য ওয়ার্ল্ড’ এবং ‘স্ট্রিক্টলি কাম ডান্সিং’ এর মতো জনপ্রিয় অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছেন। ধারাভাষ্যকার হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন।

তবে, বিলি মঙ্গারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ‘আয়রনম্যান’ প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় সাঁতার, সাইকেল চালানো এবং দৌড়—এই তিনটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে।

বিলি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে আগের রেকর্ড ভেঙে দেন। তিনি ১৪ ঘণ্টা ২৩ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে কোর্সটি শেষ করেন, যা একজন প্রতিবন্ধী প্রতিযোগীর জন্য বিশ্ব রেকর্ড।

হাওয়াই দ্বীপে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াটা বিলির জন্য সহজ ছিল না। সাঁতারের সময় জেলিফিশের কামড় এবং গভীর সমুদ্রের প্রতি তার ভীতি ছিল।

কিন্তু, সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে তিনি প্রমাণ করেছেন, মানুষের ইচ্ছাশক্তি এবং আত্মবিশ্বাস থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।

বিলি মঙ্গারের এই সাফল্যের পেছনে ছিল তার পরিবারের সমর্থন। তার মা-বাবা দুজনেই চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত।

তার মা ছিলেন একজন মেকআপ শিল্পী, যিনি ‘হ্যারি পটার’ এর মতো জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন।

বিলি মঙ্গারের স্বপ্ন এখানেই শেষ নয়। ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস প্যারালিম্পিকে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তিনি প্যারাত্রাথলন, অর্থাৎ সাঁতার, সাইকেল চালানো এবং দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চান। বিলি মঙ্গারের জীবন আমাদের শিক্ষা দেয়, প্রতিকূলতা যতই আসুক না কেন, সাহস ও ইচ্ছাশক্তি দিয়ে তা জয় করা সম্ভব।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *