স্বাধীনতা চেয়ে মৃত্যু! ২৫০ বছর আগের সেই বিখ্যাত উক্তি, যা আজও জ্বালায়?

“স্বাধীনতা দাও, না হয় মৃত্যু দাও!” – এই বিখ্যাত উক্তিটি আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁক তৈরি করেছিল। ২৫০ বছর আগে, ১৭৭৫ সালের এই দিনে আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ প্যাট্রিক হেনরি ভার্জিনিয়ার একটি জনাকীর্ণ চার্চে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে এই কথা বলেছিলেন।

তাঁর এই সাহসী উচ্চারণ শুধু আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেনি, বরং যুগে যুগে নিপীড়ন ও শৃঙ্খল ভাঙার মন্ত্র হিসেবেও মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে।

প্যাট্রিক হেনরি, যিনি ১৭৩৬ সালে ভার্জিনিয়ার একটি প্রভাবশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, ছিলেন এক অসাধারণ বাগ্মী। তাঁর তীক্ষ্ণ যুক্তিবোধ এবং ব্রিটিশ শাসনের কঠোর নীতির বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে।

ব্রিটিশ সরকার যখন আমেরিকার উপনিবেশগুলোর উপর বিভিন্ন কর আরোপ করে, তখন হেনরি এর তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি মনে করতেন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উপনিবেশগুলোর কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই, তাই তাদের উপর কর বসানোর কোনো অধিকার নেই।

তাঁর এই দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণেই তিনি উপনিবেশগুলোতে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে পরিচিত হন।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যায়, হেনরির এই ভাষণ ছিল এক সংকটপূর্ণ মুহূর্তে উচ্চারিত। ব্রিটিশ সরকার বোস্টন বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল এবং নির্বাচিত কর্মকর্তাদের সরিয়ে সেখানে নিজেদের লোক বসিয়েছিল।

এর ফলে উপনিবেশগুলোতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এমন পরিস্থিতিতে হেনরি তাঁর ভাষণে উপনিবেশবাসীদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “স্বাধীনতা দাও, না হয় মৃত্যু দাও!” এই সাতটি শব্দ যেন আগুনের ফুলকির মতো কাজ করেছিল।

অনেকের মতে, হেনরির এই ভাষণ ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলমন্ত্র। যদিও ভাষণের পূর্ণাঙ্গ লিখিত রূপ সেই সময়ে পাওয়া যায়নি, তবে তাঁর মৃত্যুর প্রায় ৪০ বছর পর ১৮১৭ সালে প্রকাশিত একটি জীবনীতে এর কথা উল্লেখ করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, হেনরি তাঁর বক্তৃতার সময় একটি ছুরি বুকের কাছে ধরে স্বাধীনতা অথবা মৃত্যুর কথা বলেছিলেন।

সময়ের সাথে সাথে হেনরির এই উক্তি শুধু আমেরিকায় নয়, সারা বিশ্বেই স্বাধীনতা ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। চীনের তিয়েনআনমেন স্কয়ারের বিক্ষোভ থেকে শুরু করে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ পর্যন্ত, বিভিন্ন সময়ে মানুষ এই উক্তি ব্যবহার করে নিজেদের অধিকারের কথা বলেছে।

এমনকি, ডোনাল্ড ট্রাম্পও তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্যে এই বিখ্যাত উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন।

প্যাট্রিক হেনরির উত্তরসূরি, প্যাট্রিক হেনরি জলি বলেন, তাঁর পূর্বপুরুষের এই উক্তি আজও মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। তিনি মনে করেন, এই উক্তিটি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য।

তবে এর আসল প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি।

প্যাট্রিক হেনরির ‘স্বাধীনতা অথবা মৃত্যু’র এই আহ্বান শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং এটি একটি চিরন্তন বার্তা। এটি যুগে যুগে মানুষকে তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং স্বাধীনতার গুরুত্ব অনুভব করতে শিখিয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও এমন আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত রয়েছে, যা আমাদের স্বাধীনতা ও আত্ম-মর্যাদার গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখায়।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *