চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং-এর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক সিনেটর স্টিভ ডেইন্স। বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাণিজ্য শুল্ক এবং অবৈধ ফেন্টানাইল ব্যবসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা প্রশমনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
রবিবার অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে লি কিয়াং বলেন, বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করা উচিত, কোনো প্রকার সংঘাত নয়। তিনি উল্লেখ করেন, উভয় দেশের সম্পর্ক এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় দুই দেশকে অংশীদার ও বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যারা একে অপরের সাফল্যে অবদান রাখতে পারে।
বৈঠকে লি কিয়াং আরও বলেন, চীন আশা করে যে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে মিলে দুই দেশের মধ্যে স্থিতিশীল ও টেকসই সম্পর্ক গড়ে তুলতে কাজ করবে। চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া জানিয়েছে, লি কিয়াং বাণিজ্য যুদ্ধে কোনো বিজয়ী নেই বলেও মন্তব্য করেছেন।
তিনি বিদেশি কোম্পানিগুলোকে, বিশেষ করে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে, চীনের উন্নয়ন সুযোগগুলো কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, সিনেটর ডেইন্স, যিনি ট্রাম্পের একজন গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক, এই বৈঠকের আগে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেছেন। তিনি চীনের ভাইস প্রিমিয়ার এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে চীনের প্রতি ফেন্টানাইল তৈরির উপকরণ সরবরাহ বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বর্তমানে, বিশ্বের বৃহত্তম এই দুই অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক বেশ খারাপ অবস্থায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যার জবাবে চীন মার্কিন কৃষি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন তাদের শুল্কনীতি ‘ন্যায্যতার’ স্বার্থে অন্যান্য দেশের আমদানি শুল্কের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার পরিকল্পনা করছে, যা সম্ভবত ২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে পারে।
এদিকে, চীন উন্নয়ন ফোরামে লি কিয়াং বলেন, তার দেশ অপ্রত্যাশিত ধাক্কা অনুভব করতে পারে, যা প্রধানত বাইরের কারণগুলোর জন্য হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, স্থানীয় অর্থনীতির মসৃণতা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় নতুন নীতি গ্রহণ করবে।
অর্থনৈতিক বিভাজন ও অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ায় লি কিয়াং বাজারের উন্মুক্ততার ওপর জোর দেন এবং উদ্যোক্তাদের বৈশ্বিক অর্থনীতি বজায় রাখতে সক্রিয়ভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা প্রতিযোগিতার বিরোধী নই, তবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়মের অধীনে ন্যায্য প্রতিযোগিতা সমর্থন করি, শূন্য-সমষ্টির খেলা বা অন্য দেশগুলোর দ্বারা বিদ্বেষপূর্ণ প্রতিযোগিতা দমন করার পক্ষপাতী নই।
যুক্তরাষ্ট্রও চীনের বিরুদ্ধে ফেন্টানাইলের উপাদান রপ্তানি বন্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ করেছে। চীন এর প্রতিক্রিয়ায় ফেন্টানাইল ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এবং এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপকে প্রত্যাখ্যান করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং উত্তেজনা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ।
আবার, বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসলে, বাংলাদেশ নতুন সুযোগও পেতে পারে। তাই, এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং উভয় দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস