জর্জ ফোরম্যান: কেমন ছিলেন কিংবদন্তি বক্সার?

শিরোনাম: জর্জ ফরম্যান: বক্সিং কিংবদন্তীর জীবন ও মানবতা

সারা বিশ্বের ক্রীড়ামোদী মানুষের হৃদয়ে গেঁথে থাকা এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম জর্জ ফরম্যান। ৭৭ বছর বয়সে গত ২১শে মার্চ তিনি আমাদের ছেড়ে গেছেন, রেখে গেছেন বক্সিংয়ের সোনালী দিনের অসংখ্য স্মৃতি।

শুধু একজন কিংবদন্তী বক্সার হিসেবেই নয়, বরং একজন মানবিক মানুষ হিসেবেও তিনি পরিচিত ছিলেন।

জর্জ ফরম্যানের বক্সিং ক্যারিয়ার ছিল ঈর্ষণীয়। ১৯৬৮ সালের অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয় করে তিনি বিশ্ব দরবারে নিজের আগমনী বার্তা জানান।

পরবর্তীতে, ১৯৭৩ সালে জ্যামাইকাতে জো ফ্রেজিয়ারকে হারিয়ে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন তিনি।

১৯৭৪ সালে জায়ারে অনুষ্ঠিত এক ঐতিহাসিক লড়াইয়ে মোহাম্মদ আলীর কাছে খেতাব হারান। এরপর, দীর্ঘ বিরতির পর আবারও বক্সিংয়ে ফিরে এসে তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

এই অসাধারণ প্রত্যাবর্তন তাকে কিংবদন্তীতে পরিণত করেছে।

বক্সিংয়ের বাইরেও জর্জ ফরম্যানের পরিচিতি ছিল একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে।

তার ‘জর্জ ফরম্যান গ্রিলিং মেশিন’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এর মাধ্যমে তিনি ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করেন।

এই পণ্যটি তাকে এনে দেয় বিপুল খ্যাতি ও অর্থ।

তবে, জর্জ ফরম্যানের আসল পরিচয় লুকিয়ে ছিল তার মানবিক গুণাবলীর মধ্যে।

তিনি ছিলেন অত্যন্ত উদার ও দয়ালু একজন মানুষ।

তার ভেতরের এই মানুষটিকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন এমন একজন জানিয়েছেন, জর্জ ফরম্যান সবসময় অন্যদের জন্য ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাইতেন।

জর্জ ফরম্যান ছোটবেলায় সনি লিস্টনের মতো বক্সারদের দেখে তাদের মতো হতে চাইতেন।

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অনেকের আচরণে পরিবর্তন আসলেও তিনি চেষ্টা করতেন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত হতে।

তিনি বলতেন, “আমি চাই মানুষ ভালো ব্যবহার করুক। ভালো কাজ করলে সেটাই ধর্ম।”

একবার, আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসে বর্ণবাদের জেরে রায়টের সময় জর্জ ফরম্যান সেখানকার দরিদ্র মানুষের জন্য ১ মিলিয়ন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১১ কোটি টাকার বেশি) অনুদান দিয়েছিলেন, যাতে তারা প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র কিনতে পারে।

এছাড়া, তিনি দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্যেও সাহায্য করতেন।

জর্জ ফরম্যানের জীবনে মোহাম্মদ আলীর প্রভাব ছিল গভীর।

তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত দৃঢ়।

আলী এবং ফরম্যান দুজনেই ছিলেন ধর্মপ্রাণ এবং তাদের মধ্যে ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ।

জর্জ ফরম্যান সবসময় আলীর প্রতি সম্মান দেখাতেন।

জর্জ ফরম্যানের প্রয়াণে ক্রীড়া জগৎ একজন মহান ব্যক্তিত্বকে হারালো, যিনি শুধু বক্সিংয়েই নয়, মানবতার আলো ছড়াতেও সবসময় অগ্রণী ছিলেন।

তথ্যসূত্র: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অবলম্বনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *