হলিউডের সিনেমা জগতে ২০২৩ সালটা খুব একটা ভালো কাটেনি, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘স্নো হোয়াইট’ সিনেমাটিও বক্স অফিসে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি।
ডিজনির এই লাইভ-অ্যাকশন সিনেমাটি মুক্তির প্রথম সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৪৩ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা তাদের প্রত্যাশার থেকে অনেক কম।
১৯৩৭ সালে মুক্তি পাওয়া ডিজনির ক্লাসিক অ্যানিমেটেড সিনেমা ‘স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডোয়ার্ফস’ ছিল তাদের প্রথম রঙিন ছবি। নতুন এই লাইভ-অ্যাকশন সিনেমাটি তৈরি করতে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ হয়েছে।
সেই হিসেবে, এই আয়ের অঙ্কটি বেশ হতাশাজনক।
সিনেমা মুক্তির আগে থেকেই অবশ্য নানা বিতর্ক দেখা দেয়। বামনদের (dwarfs) চিত্রায়ন নিয়ে অনেকে আপত্তি জানান, আবার সিনেমার প্রধান অভিনেত্রী র্যাচেল জেগলারের কিছু মন্তব্যের কারণেও সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এমনকি মুক্তির আগে প্রিমিয়ারও বাতিল করতে বাধ্য হয় ডিজনির কর্তৃপক্ষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিনেমার দুর্বল চিত্রনাট্যও দর্শক টানতে ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ। সমালোচকদের অনেকেই সিনেমাটি নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ দেখাননি, ‘রটেন টমেটোস’-এ সিনেমাটির রেটিং মাত্র ৪৩%।
ডিজনির অন্যান্য লাইভ-অ্যাকশন সিনেমার ব্যবসার সঙ্গে তুলনা করলে ‘স্নো হোয়াইট’-এর এই ব্যবসা বেশ হতাশাজনক। যদিও জন ফ্যাভরুর ‘দ্য লায়ন কিং’ (২০১৯) তেমন ভালো রিভিউ পায়নি, তবুও বিশ্বজুড়ে ১.৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছিল।
এমনকি ‘ডাম্বো’ (২০১৯) সিনেমার প্রথম সপ্তাহের আয়ের চেয়েও ‘স্নো হোয়াইট’-এর সংগ্রহ কম। ২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সিনেডারেলা’ সিনেমাটি প্রথম সপ্তাহে ৬৭.৯ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল, যেখানে ‘স্নো হোয়াইট’-এর সংগ্রহ সে তুলনায় অনেক কম।
আন্তর্জাতিক বাজারে ‘স্নো হোয়াইট’ ৪৪.৩ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, ফলে বিশ্বজুড়ে সিনেমাটির মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৮৭.৩ মিলিয়ন ডলার।
মুক্তির আগে সিনেমাটি ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয়ের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছিল, কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
এই ফল ডিজনির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। কারণ, তারা তাদের পুরনো জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর লাইভ-অ্যাকশন সংস্করণ তৈরির দিকে ঝুঁকছে।
শোনা যাচ্ছে, ‘মোয়ানা’ এবং ‘টাংলেড’-এর মতো সিনেমাগুলোও খুব শীঘ্রই নতুন রূপে আসতে চলেছে। এছাড়া, আগামী মে মাসে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে লাইভ-অ্যাকশন ‘লিলো অ্যান্ড স্টিচ’।
তবে ‘স্নো হোয়াইট’-এর আধুনিক সংস্করণ তৈরির পরিকল্পনা শুরু থেকেই বিতর্কের জন্ম দেয়। অভিনেতা পিটার ডিঙ্কলেজ ২০২২ সালে এই সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনার সমালোচনা করে একে ‘পশ্চাৎপদ’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
পরবর্তীতে ডিজনির পক্ষ থেকে সিনেমাটির নাম থেকে ‘অ্যান্ড দ্য সেভেন ডোয়ার্ফস’ বাদ দেওয়া হয় এবং বামনদের চরিত্রগুলো অ্যানিমেটেড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া, রক্ষণশীল মহলের অনেকে এই সিনেমা এবং র্যাচেল জেগলারের অভিনয়কে ‘অতিরিক্ত সংবেদনশীল’ বলে মন্তব্য করেন।
সিনেমাটির নির্মাণে কয়েক দফা বিলম্ব এবং দৃশ্যধারণের কারণে খরচও বেড়ে যায়।
তবে ডিজনির কিছু সিনেমা বক্স অফিসে ভালো ফল করেছে। ‘মায়াফাসা: দ্য লায়ন কিং’ (Barry Jenkins)-এর নির্মাণে ঘরোয়াভাবে ৩৪.৪ মিলিয়ন ডলার আয়ের পর বিশ্বজুড়ে ৭১৭ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হয়।
মুক্তির পর ‘স্নো হোয়াইট’-এর সামনে তেমন কোনো বড় প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। সিনেমাটি দর্শকদের কাছ থেকে ‘বি প্লাস’ সিনেমা স্কোর (CinemaScore) পেয়েছে।
অন্যদিকে, ওয়ার্নার ব্রাদার্সের ‘আল্টো নাইটস’ (Alto Knights) নামের একটি গ্যাংস্টার ঘরানার সিনেমা বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
রবার্ট ডি নিরো অভিনীত ছবিটি নির্মাণে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার খরচ হলেও, মুক্তির প্রথম সপ্তাহে মাত্র ৩.২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। একই প্রযোজনা সংস্থার ‘মিকি ১৭’ (Mickey 17) সিনেমাটিও ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়নি।
এছাড়াও, ‘ম্যাগাজিন ড্রিমস’ (Magazine Dreams) নামের একটি সিনেমা মুক্তির প্রথম সপ্তাহে ৮১৫টি প্রেক্ষাগৃহে ৭ লক্ষ ডলার আয় করেছে। এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন জোনাথন মেজর্স।
সব মিলিয়ে, ২০২৩ সালটা হলিউডের জন্য ভালো যাচ্ছে না। তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছর বক্স অফিসের আয় ৬.৯% কমেছে এবং ২০১৯ সালের তুলনায় কমেছে ৩৮.৬%।
যুক্তরাষ্ট্রের বক্স অফিসের শীর্ষ ১০ সিনেমার তালিকা:
- ‘স্নো হোয়াইট’ – ৪৩ মিলিয়ন ডলার।
- ‘ব্ল্যাক ব্যাগ’ – ৪.৪ মিলিয়ন ডলার।
- ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেইভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ – ৪.১ মিলিয়ন ডলার।
- ‘মিকি ১৭’ – ৩.৯ মিলিয়ন ডলার।
- ‘নোভোকেইন’ – ৩.৮ মিলিয়ন ডলার।
- ‘আল্টো নাইটস’ – ৩.২ মিলিয়ন ডলার।
- ‘দ্য ডে দ্য আর্থ ব্লিউ আপ’ – ১.৮ মিলিয়ন ডলার।
- ‘দ্য মানকি’ – ১.৫ মিলিয়ন ডলার।
- ‘ডগ ম্যান’ – ১.৫ মিলিয়ন ডলার।
- ‘দ্য লাস্ট সাপার’ – ১.৩ মিলিয়ন ডলার।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস