ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। গাজায় বোমা হামলা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তারা বলছেন, নেতানিয়াহু যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছেন।
খবর অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার থেকে গাজায় বিমান হামলা জোরদার করা হয়, যা এরই মধ্যে পাঁচ শতাধিক ফিলিস্তিনির জীবন কেড়ে নিয়েছে, যাদের মধ্যে ২০০ জনের বেশি শিশুও রয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা। তাদের মতে, গাজায় হামলা চালিয়ে তিনি আসলে সরকারে নিজের অবস্থান আরও শক্ত করতে চাইছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তের পেছনে অন্যতম কারণ হলো, তার জোট সরকারের বাজেট পাস করানো। মার্চের ৩১ তারিখের মধ্যে বাজেট পাস না হলে নতুন করে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরকারের বাজেট পাসের জন্য নেতানিয়াহুকে কট্টর-ডানপন্থী রাজনীতিবিদ ইতামার বেন-গভিরের সমর্থন প্রয়োজন। বেন-গভির গত জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
কিন্তু গাজায় হামলা শুরুর পর তিনি আবার সরকারে ফিরে আসেন। বিক্ষোভকারীরা বেন-গভিরের এই ফিরে আসাকে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন।
তাদের মতে, এর মাধ্যমে নেতানিয়াহু নিশ্চিত করতে চেয়েছেন, সংসদে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় থাকুক এবং বাজেট পাস হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপের কারণে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। জনগণের মধ্যে তার সরকারের প্রতি অসন্তোষ বাড়ছে।
তারা মনে করছেন, নেতানিয়াহু দেশের জনগণের কল্যাণের চেয়ে নিজের ক্ষমতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
এদিকে, নেতানিয়াহু তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তিনি বলছেন, একটি ‘গভীর রাষ্ট্র’ (deep state) তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই ‘গভীর রাষ্ট্র’ তার বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে। যদিও সমালোচকরা বলছেন, নেতানিয়াহুর এই অভিযোগ আসলে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুকরণ।
নেতানিয়াহু বর্তমানে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের প্রধান রনেন বারকে বরখাস্ত করার চেষ্টা করছেন। বার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছেন।
এছাড়াও, অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারাভ-মিয়ারার পদত্যাগেরও চেষ্টা চলছে। যদিও সুপ্রিম কোর্ট শিন বেট প্রধানকে অপসারণের সরকারের প্রচেষ্টা স্থগিত করেছে।
অন্যদিকে, ৭ অক্টোবর হামাস কর্তৃক ইসরায়েলে চালানো হামলায় ১,১3৯ জন নিহত হয় এবং দুই শতাধিক মানুষকে বন্দী করা হয়। নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, শিন বেট প্রধানকে সরানোর কারণ হলো, ৭ অক্টোবরের হামলায় নিরাপত্তা সংস্থার ব্যর্থতা।
কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, নেতানিয়াহুর এসব পদক্ষেপ ইসরায়েলের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা