গাজায় হাসপাতালে ইসরাইলি হামলায় নিহত, শীর্ষ হামাস নেতার মৃত্যু!

গাজায় একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে হামাস নেতাও রয়েছেন। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে এই হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটে, জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তাদের অভিযানটি ছিল হামাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে লক্ষ্য করে, এবং এর মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

হামাস জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে তাদের রাজনৈতিক বিভাগের সদস্য ইসমাইল বারহুমও রয়েছেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট নিশ্চিত করেছেন যে, বারহুম ছিলেন তাদের লক্ষ্য।

তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সরাসরি ওই ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেনি, বরং তাকে হামাসের একজন “গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাসী” হিসেবে বর্ণনা করেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা ভিডিওতে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়। তবে রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

হামাসের আল-আকসা টিভি জানিয়েছে, বারহুম আগের একটি হামলায় আহত হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ইসরায়েল সবসময় অভিযোগ করে আসছে যে হামাস হাসপাতাল, স্কুল ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে তাদের কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করে, যদিও হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করে।

যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় ইসরায়েলের নতুন করে বিমান ও স্থল অভিযান শুরুর পর সেখানকার ফিলিস্তিনিরা আবারও জীবন বাঁচাতে পালাতে শুরু করেছে। হামাস জানিয়েছে, খান ইউনিসে পৃথক এক হামলায় হামাসের আরেক নেতা সালাহ আল-বারদাউইলও নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা শনিবার বারদাউইলকে হত্যা করেছে।

হামাস সূত্রে জানা গেছে, বারদাউইল ও বারহুম – দুজনেই হামাসের ১৯ সদস্যের রাজনৈতিক অফিসের সদস্য ছিলেন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই অফিসের ১১ জন সদস্য নিহত হয়েছেন।

গাজার উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলে রোববার ভোরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বিমান ওই এলাকাগুলোতে আঘাত হেনেছে, যা সপ্তাহখানেক আগে শুরু হওয়া হামলার একটি নতুন রূপ।

লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াই করা ইসরায়েলের একটি ডিভিশন গাজায় সম্ভাব্য অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ট্যাংকের ছবি দিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে লেখা ছিল, “গাজা উপত্যকায় অভিযানের জন্য ৩৬তম ডিভিশনের প্রস্তুতি।”

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার পর্যন্ত রাফা ও খান ইউনিসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, গত ১৮ মাসের সংঘাতে মৃতের সংখ্যা ৫০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করছে এবং হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দেওয়া হতাহতের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, গাজায় নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের হামলায় প্রায় ২০,০০০ জঙ্গি নিহত হয়েছে। তবে হামাস হতাহতের কোনো সংখ্যা প্রকাশ করে না।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধের লক্ষ্য হলো সামরিক ও প্রশাসনিক কাঠামো হিসেবে হামাসকে ধ্বংস করা। মঙ্গলবার তিনি জানান, নতুন অভিযানের উদ্দেশ্য হলো হামাসকে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে বাধ্য করা।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন নেতানিয়াহুকে ফোন করে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তারা গাজায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযান, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা এবং ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নিয়ে আলোচনা করেন।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়েছিল, যাতে বেশিরভাগ বেসামরিক নাগরিকসহ প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করা হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, “ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে জীবনহানি অত্যন্ত দুঃখজনক। যতদিন এই যুদ্ধ চলবে, উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই বেসামরিক মানুষের জীবনকে সম্মান করতে হবে এবং গাজার কিছু অংশকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করার হুমকি গ্রহণযোগ্য নয়।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *