ইসরায়েলে নতুন মোড়: নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তে কি গৃহযুদ্ধ?

ইসরায়েলে রাজনৈতিক অস্থিরতা: নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তে বিচার বিভাগের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা

তেল আবিব, ইসরায়েল – ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের অপসারণের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়ায় দেশটিতে গভীর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের প্রধান রনেন বারকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

একইসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারভ-মিয়ারাকেও সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তের জেরে ইসরায়েলের রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম বিভেদ দেখা দিয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে সরকারের সরাসরি সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এসেছে যখন তিনি নিজে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত এবং শিন বেট তার অফিসের অভ্যন্তরে একটি সম্ভাব্য গুপ্তচরবৃত্তির তদন্ত করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তগুলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা, যা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকেই ইসরায়েলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল। ওই ঘটনার জন্য কারা দায়ী, তা নিয়েও বিতর্ক চলছে।

নেতানিয়াহু সরাসরি দায় স্বীকার না করে সামরিক বাহিনী এবং শিন বেটের কর্মকর্তাদের দিকে আঙুল তুলেছেন। অনেকে মনে করছেন, নেতানিয়াহু তার ক্ষমতা ধরে রাখতে এবং চলমান দুর্নীতি মামলা থেকে বাঁচতে এমনটা করছেন।

নেতানিয়াহু সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ বিশিষ্ট আইনজ্ঞরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, এমনটা চলতে থাকলে দেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

বিরোধী দলীয় নেতারা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ট্যাক্স বন্ধের ডাক দিয়েছেন। এমনকি, আদালতের রায় অমান্য করা হলে দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘটেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট, যা দেশটির সর্বোচ্চ আদালত, সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্তের ওপর নজর রাখে। বর্তমান পরিস্থিতিতে, রনেন বারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে।

আদালত এই বিষয়ে শুনানির জন্য স্থগিতাদেশ জারি করেছে। একইসঙ্গে, অ্যাটর্নি জেনারেলকে অপসারণের সিদ্ধান্তের আইনি বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

সুপ্রিম কোর্ট যদি নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রায় দেয়, তাহলে তা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। এমতাবস্থায়, সরকার যদি আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে, তবে তা গুরুতর সাংবিধানিক সংকট ডেকে আনতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপগুলো ইসরায়েলের গণতন্ত্রের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ। কারণ, এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং সরকারের ক্ষমতা আরও বাড়বে।

পরিস্থিতি যদি দ্রুত স্বাভাবিক না হয়, তবে তা দেশের অভ্যন্তরে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, যা ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *