কানাডার নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন দুই প্রধান প্রতিপক্ষ!

কানাডার আসন্ন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা: সার্বভৌমত্ব রক্ষার চ্যালেঞ্জ। টরন্টো, কানাডা – আগামী ২৮শে এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কানাডার সাধারণ নির্বাচন এখন একটি নতুন মোড় নিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এবং কানাডার সার্বভৌমত্ব নিয়ে করা কিছু মন্তব্যের কারণে নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সম্পর্ক।

এই নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এবং প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা পিয়েরে পয়েলিয়েভরের মধ্যে মূল লড়াইটি অনুষ্ঠিত হবে। কানাডার পার্লামেন্ট হলো হাউস অফ কমন্স, যেখানে মোট ৩৪3 জন সদস্য রয়েছেন।

যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে, তারা সরকার গঠন করবে এবং তাদের নেতা প্রধানমন্ত্রী হবেন। নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করবে কানাডার ভবিষ্যৎ, বিশেষ করে দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতি কেমন হবে, সেটি।

নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে, প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এবং কানাডার প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গিকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ এবং সার্বভৌমত্ব নিয়ে করা মন্তব্যগুলো “জীবনকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংকট” তৈরি করেছে।

কার্নি স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা আমাদের দেশ কারও কাছে বিক্রি হতে দেব না।” অন্যদিকে, বিরোধী দলীয় নেতা পিয়েরে পয়েলিয়েভরেও ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই কানাডার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান করতে হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমি নিশ্চিত করতে চাই যে, প্রেসিডেন্ট আমাদের দেশের বিরুদ্ধে কোনো শুল্ক আরোপ করা বন্ধ করবেন।”

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচনের মূল বিষয় এখন দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে সরে এসে ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, তার দিকে ঝুঁকছে। কার্নি সরাসরি বলেছেন, “কানাডিয়ানদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে – তারা কি ঐক্যবদ্ধ একটি সরকারের সঙ্গে থাকবে, নাকি ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা কোনো দলের সঙ্গে?”

আগে ধারণা করা হচ্ছিলো, খাদ্য ও আবাসনের মূল্যবৃদ্ধি এবং অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলো নির্বাচনের প্রধান ইস্যু হবে। কিন্তু ট্রাম্পের বিভিন্ন মন্তব্যের কারণে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।

তিনি এর আগে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যা কানাডিয়ানদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগে কানাডার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন।

এমনকি তিনি কানাডার সকল পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকিও দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড্যানিয়েল বেলার্ডের মতে, কনজারভেটিভ পার্টির জন্য বিষয়গুলো বেশ উদ্বেগের।

কারণ তাদের নেতা পিয়েরে পয়েলিয়েভরের সঙ্গে ট্রাম্পের আদর্শিক মিল রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। মার্ক কার্নি অতীতে কানাডার ব্যাংক অফ কানাডার প্রধান এবং ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

অন্যদিকে, পিয়েরে পয়েলিয়েভর একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। কানাডার এই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে।

কারণ, এটি দেখায় কীভাবে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। বিশেষ করে, বাণিজ্য যুদ্ধ এবং সার্বভৌমত্বের মতো বিষয়গুলো একটি দেশের অর্থনীতি ও জনগণের ওপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা এখানে স্পষ্ট।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *