রাস্তার পাশে সারস, বৃষ্টিতে হরিণের ডাক! ছবিতে বন্যজীবন, চমকে দিলো পুরস্কার

শহরের বুকে বন্যপ্রাণ: ব্রিটিশ বন্যপ্রাণী আলোকচিত্র পুরস্কারে প্রকৃতির ভিন্ন রূপ। বর্তমান যুগে, যখন মানুষ দ্রুত নগরায়নের দিকে ঝুঁকছে, তখন শহরের আশেপাশে বন্যপ্রাণীদের জীবনযাত্রা কেমন, তা নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে ব্রিটিশ বন্যপ্রাণী আলোকচিত্র পুরস্কারে।

২০২৩ সালের এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন মনোমুগ্ধকর ছবি স্থান পেয়েছে, যা প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছে। পুরস্কার বিজয়ী ছবিগুলো শুধু বন্যপ্রাণীদের ছবিই নয়, বরং তারা কিভাবে মানুষের কাছাকাছি এসে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে, সেই গল্পও বলে।

এবছরের প্রতিযোগিতায় প্রায় ১৩,০০০ ছবি জমা পড়েছিল। যেখানে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে। এই পুরস্কারের মূল উদ্দেশ্য হলো, ব্রিটেনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের প্রতি আলোকপাত করা।

বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রশিল্পী উইল নিকোলস বলেন, “এই প্রতিযোগিতা শুধু ফটোগ্রাফারদের শিল্পকর্মকেই সম্মানিত করে না, বরং বন্য পরিবেশ রক্ষার গুরুত্বকেও তুলে ধরে।”

পুরস্কারের প্রধান আকর্ষণ ছিল সাইমন উইথিম্যান এর তোলা একটি ছবি। যেখানে একটি চালাক শেয়ালকে শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।

এই ছবিটি এবারের প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জয় করেছে এবং তিনি ৩,৫০০ পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা) পুরস্কার জিতেছেন। তিনি টানা তিন বছর ধরে এই শেয়ালটির ছবি তুলেছেন।

উইথিম্যান এর মতে, তিনি এই ছবিটির মাধ্যমে শহরের সাধারণ দৃশ্যগুলোতেও যে সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে, সেটি তুলে ধরতে চেয়েছেন।

তরুণ আলোকচিত্রী বিভাগে পুরস্কার জিতেছে নয় বছর বয়সী জেমি স্মার্ট। উইল্টশায়ারের এক প্রান্তরে ডেইজি ফুলের মাঝে একটি কার্লিউ পাখির ছবি তুলে সে এই খেতাব অর্জন করে।

১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের বিভাগে বিজয়ী হয়েছে বেন লুকাস। সে একটি ফাস্ট ফুডের দোকানের বাইরে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের প্যাকেট থেকে খাবার খাওয়ার জন্য আসা পায়রার ছবি তুলে পুরস্কৃত হয়েছে।

বেন জানিয়েছেন, তিনি ফ্রাইয়ের প্যাকেটটির মধ্যে একটি ক্যামেরা সেট করেছিলেন, যা দেখে পথচারীরা বেশ অবাক হয়েছিল।

প্রতিযোগিতায় স্কটল্যান্ডের তুষারাবৃত অঞ্চলের ছবি এবং ব্রিটিশ উপকূলের হাঙর ও সিল মাছের ছবিও স্থান পেয়েছে। তবে এবার শহরের বন্যপ্রাণীর ছবিগুলোই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।

শহরগুলোতে মানুষের জীবনযাত্রার সাথে বন্যপ্রাণীদের সহাবস্থান কিভাবে সম্ভব, সে বিষয়টির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।

পরিবেশবিদদের মতে, ব্রিটেনের বন্যপ্রাণী ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে। একটি গবেষণা বলছে, ১৯৭০ সাল থেকে বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের সংখ্যা ১৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে এবং প্রায় ছয় ভাগের এক ভাগ প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।

আলোকচিত্রী উইল নিকোলস মনে করেন, ছবি তোলার মাধ্যমে প্রকৃতির প্রতি মানুষের সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব। তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করি, এই ছবিগুলো মানুষকে বন্যপ্রাণীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে এবং তাদের রক্ষা করতে উৎসাহিত করবে।”

আসলে, প্রকৃতির এই ছবিগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শহরের কোলাহলের মাঝেও প্রকৃতির এক ভিন্ন জগৎ বিদ্যমান। এই ছবিগুলো শুধু ব্রিটেনের নয়, বরং সারা বিশ্বের শহরগুলোতে মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণীর সম্পর্ককে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *