মরু সাহারায় এক টুকরো ভেনিস! কিভাবে সম্ভব হলো?

মরুভূমির বুকে এক টুকরো ভেনিস: কাতারের ‘দ্য পার্ল’

বিশ্বজুড়ে আধুনিক নগর পরিকল্পনার ধারণা ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। শহরগুলোতে এখন শুধু কংক্রিটের জঙ্গল নয়, বরং এমন এক স্থান তৈরির চেষ্টা চলছে যেখানে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে, পরিবেশের দিকে নজর দেওয়া হবে এবং আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে হাতের নাগালে।

তেমনই একটি অভিনব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কাতার। দেশটির রাজধানী দোহা থেকে সামান্য দূরে, সমুদ্রের বুকে গড়ে উঠেছে ‘দ্য পার্ল’ নামের এক কৃত্রিম দ্বীপ, যেখানে ভেনিসের আদলে তৈরি হয়েছে এক অত্যাধুনিক শহর।

প্রায় ২০ বছর আগে এই দ্বীপের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। মূলত আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী এবং কাতারের বাইরের বাসিন্দাদের জন্য তৈরি করা এই শহরে ভেনিসের আদলে তৈরি ক্যানেল, রঙিন বাড়িঘর, এবং নৌবন্দরগুলো দেখলে মনে হয় যেন মরুভূমির বুকে এক টুকরো ভেনিস এসে পড়েছে।

এখানে একদিকে যেমন অত্যাধুনিক স্থাপত্যশৈলী, তেমনই অন্যদিকে রয়েছে সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়া। দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর পাশাপাশি এই দ্বীপটিতে বসবাসকারীদের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে আধুনিক জীবনযাত্রার সকল সুযোগ-সুবিধা।

এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দোকান, ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, বিনোদন কেন্দ্র, এবং খেলার মাঠ।

‘দ্য পার্ল’ দ্বীপটি তৈরি করার পেছনে কাতারের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি স্বনির্ভর এবং পরিবেশবান্ধব শহর তৈরি করা। এই লক্ষ্যে তারা ভূমি পুনরুদ্ধার করে দ্বীপটি তৈরি করেছে এবং এখানে বসবাসকারীদের জন্য ফ্রিহোল্ড ওনারশিপের ব্যবস্থা করেছে।

এই দ্বীপের বিভিন্ন অংশে রয়েছে আলাদা আলাদা স্থাপত্যশৈলীর আবাসস্থল, যেমন- পোর্তো আরাবিয়া, ক্যানেল কোয়ার্টার, ভিভা বাহরিয়া এবং ফ্লোরেস্টা গার্ডেনস। প্রতিটি এলাকার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ক্যানেল কোয়ার্টার-এ ভেনিসের আদলে তৈরি বাড়িগুলো দর্শকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে।

দ্বীপটির পরিবেশ সুরক্ষার দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। এখানে একটি কেন্দ্রীয় কুলিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে, যা পরিশোধিত বর্জ্য জল ব্যবহার করে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রয়েছে একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্ল্যান্ট।

এছাড়া, এখানকার পার্ক ও সমুদ্রতীরগুলো বিভিন্ন পাখির আবাসস্থল, যা প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

এই দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে আলজেরিয়ার ইনসাফ বেনাজায়েদ জানান, এখানকার জীবনযাত্রার মান এবং সামাজিক পরিবেশ তাকে মুগ্ধ করেছে।

লেবাননের মিরনা সায়েফান এখানকার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার সুযোগকে বেশ উপভোগ করেন।

এখানকার ‘মাদিনাত সেন্ট্রাল’ দ্বীপটির কেন্দ্র, যেখানে রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, সুপারমার্কেট, সিনেমা হল এবং হাসপাতাল-এর মতো প্রয়োজনীয় সব সুবিধা বিদ্যমান।

‘দ্য পার্ল’-এর সাফল্যের মূল কারণ হলো এর বসবাসযোগ্যতা। এখানকার বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সবকিছু হাতের কাছেই রয়েছে, যা তাদের জীবনকে সহজ করে তোলে।

এখানকার বাসিন্দারা সহজেই পার্কে ঘুরতে যেতে পারে, ক্যাফেতে বসে আড্ডা দিতে পারে এবং বাইরের প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে পারে।

বস্তুত, ‘দ্য পার্ল’ আধুনিক নগর পরিকল্পনার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি প্রমাণ করে যে, উন্নত জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য শহর তৈরি করা সম্ভব।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *