ফ্রান্সের প্রভাবশালী অভিনেতা দেপার্দিয়ুর বিচার:MeToo-র পরে কি বদলাবে সংস্কৃতি?

ফরাসি চলচ্চিত্র জগতের প্রভাবশালী অভিনেতা জেরার্ড দেপার্দিয়েউ-এর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে প্যারিসের আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই মামলার শুনানি শুধু একজন অভিনেতার বিচার নয়, বরং #MeToo আন্দোলনের পরে ফ্রান্সে যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা সংঘটিত যৌন সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায় দেশটির দ্বিধা ও সংস্কৃতিগত পরিবর্তনের একটি চিত্রও এখানে ফুটে উঠছে।

অভিযোগ উঠেছে, ২০২১ সালে ‘লে ভলে ভের’ (Les Volets Verts) সিনেমার শুটিং চলাকালে দেপার্দিয়েউ একজন নারী পোশাক শিল্পী এবং সহকারী পরিচালকের সঙ্গে যৌন নিপীড়ন করেন। এই মামলাটি সেই ঘটনারই বিচার, যদিও এর আগে আরও ২০ জনের বেশি নারী অভিনেতার বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ এনেছেন।

মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, দেপার্দিয়েউ এক নারীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেন এবং তার গোপনাঙ্গে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন। এই ঘটনাটি ঘটেছিল সিনেমার সেটে এবং সেখানে অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

অভিযুক্তদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে, যাতে ভুক্তভোগীদের গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়। দেপার্দিয়েউ অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি এক চিঠিতে দাবি করেছেন, তিনি কখনোই কোনো নারীর প্রতি খারাপ ব্যবহার করেননি। বরং তিনি হয়তো “অতিরিক্ত ভালোবাসাপূর্ণ” অথবা “অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ” ছিলেন।

তবে ফ্রান্সের সংস্কৃতিতে যৌন নির্যাতনের অভিযোগগুলো সহজে সামনে আসে না। হলিউডে যখন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তখন ফ্রান্স কিছুটা ভিন্ন পথে হেঁটেছিল।

অনেকে #MeToo আন্দোলনকে ফরাসি সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে মনে করেন। তাদের মতে, এটি অবাধ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং হালকা প্রেমের সংস্কৃতির পরিপন্থী।

এই বিতর্কের মধ্যেই, চলচ্চিত্র পরিচালক রোমান পোলানস্কি-কে যুক্তরাষ্ট্রে নাবালিকার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হলেও, ফ্রান্সে তিনি এখনও বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছেন। এমনকি ২০২০ সালে তিনি সেরা পরিচালকের পুরস্কারও পান, যা অনেককে ক্ষুব্ধ করে তোলে।

অভিনেত্রী অ্যাডেল হ্যানেল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বয়কট করেছিলেন, যা ফ্রান্সে এই বিষয়ে চলমান বিতর্ককে আরও বাড়িয়ে তোলে।

অভিনেত্রী জুডিথ গড্রেচেও এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি এক সংসদীয় কমিটিকে জানান যে, কিশোর বয়সে তিনি পরিচালক বেনোয়া জ্যাকো এবং জ্যাক দোয়িঁয়ের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।

এই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো নীরবতার সংস্কৃতি ভেঙে দেওয়ার ইঙ্গিত দেয়, তবে প্রতিরোধের মাত্রাও কম নয়।

২০১৮ সালে অভিনেত্রী ক্যাথরিন দুনোভের নেতৃত্বে একদল ফরাসি নারী একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন, যেখানে তারা “কাউকে বিরক্ত করার অধিকার”-এর পক্ষে কথা বলেছিলেন।

জেরার্ড দেপার্দিয়েউ-এর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো শুধু একটি অভিনেতার বিচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি ফ্রান্সে ক্ষমতার অপব্যবহার, যৌন সহিংসতা এবং সমাজের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বৃহত্তর আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

#MeToo আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই বিচার প্রক্রিয়াটি ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *