কানাডার নির্বাচনে ‘হাতে হাত’: আসল কারণ কি জানেন?

কানাডার আসন্ন নির্বাচন, যা শুধু একটি দেশের ভেতরের ঘটনা নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখন মূল আলোচনার বিষয় হলো, কীভাবে তারা প্রতিবেশী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখবে।

বিশেষ করে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য বাণিজ্য নীতি এবং শুল্ক আরোপের হুমকির মুখে কানাডার অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জটি এখন প্রধান ইস্যু।

কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নে এবং বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পয়েলিয়েভ্রে – উভয়েই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাঁদের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। তাঁরা দুজনেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার কথা বলছেন, তবে তাঁদের প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে কানাডার অর্থনীতিতে তার গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কানাডার পণ্যের প্রবেশাধিকার কমে গেলে দেশটির উৎপাদন ও রপ্তানি খাতে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, কানাডার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা জরুরি। কিন্তু দেশটির শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা অন্যান্য উন্নত দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বেশ কম।

অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরে কানাডার এই দুর্বলতা নিয়ে সতর্ক করে আসছেন। তাঁরা বলছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের সময় এটি দেশটির জন্য আরও বেশি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে না পারলে জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

নির্বাচনী প্রচারণায় কার্নে এবং পয়েলিয়েভ্রে দুজনেই কর কমানো এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে, বাণিজ্য যুদ্ধের ঝুঁকি মোকাবিলায় তাঁদের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা এখনো পর্যন্ত দেখা যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, সেই বিষয়টি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কানাডার জনগণের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে। একদিকে, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির কারণে ক্ষুব্ধ, অন্যদিকে দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা তাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছে।

কানাডার এই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতিতে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্ক আরোপের মতো ঘটনা ঘটলে, তার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে।

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে, যা আমদানি-নির্ভর বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে। এছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

অতএব, কানাডার নির্বাচনের ফলাফল শুধু দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির গতিপথের ওপরও এর প্রভাব থাকবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *