যুদ্ধ নয়, কারাগারে যেতে রাজি ইসরায়েলি তরুণ! কেন?

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের অনেক তরুণ-তরুণী সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকার করছেন।

তাঁদের মধ্যে অনেকেই কারাবরণ করছেন, কিন্তু নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন কিছু তরুণের কথা, যাঁরা গাজায় শিশুদের হত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীতে সাধারণত ১৮ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের বাধ্যতামূলকভাবে যোগ দিতে হয়। কিন্তু বর্তমান গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অনেক ইসরায়েলি তরুণ-তরুণী এই সামরিক সেবায় অংশ নিতে চাইছেন না।

তাঁদের মতে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান গণহত্যাতুল্য। তাই তাঁরা কোনোভাবেই এই হত্যাযজ্ঞের অংশ হতে রাজি নন। এমনটাই জানা যায়, কারাগারে বন্দী হওয়া ইতামার গ্রিনবার্গের ভাষ্যে।

ইতামার গ্রিনবার্গ নামের এক তরুণ বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পড়াশোনা ও নৈতিক বিচারের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। তাঁর মতে, যে সামরিক বাহিনী হত্যা ও নিপীড়নের প্রতীক, সেই বাহিনীর পোশাকে তিনি কোনোভাবেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।

গ্রিনবার্গের মতে, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ তাঁর এই সিদ্ধান্তকে আরও দৃঢ় করেছে।

ইসরায়েলের এই তরুণ-তরুণীদের ‘রিফিউজ়নিক’ বা বিবেকবান প্রতিবাদকারী হিসেবে অভিহিত করা হয়। ইসরায়েলি সমাজে সামরিক বাহিনী একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দেশটির সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

ছোটবেলা থেকেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয় যে, তারা একদিন দেশের শিশুদের রক্ষা করবে। ১৬ বছর বয়স থেকে তাঁদের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়।

অনেকে এই সামরিক সেবাকে সম্মান, কর্তব্য এবং জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করে।

কিন্তু এই পরিস্থিতিতে, গ্রিনবার্গের মতো তরুণ-তরুণীরা সমাজের চোখে একঘরে হয়ে পড়ছেন। এমনকি তাঁদের পরিবার ও বন্ধুদের থেকেও তাঁরা বিদ্রূপের শিকার হচ্ছেন।

তাঁদের দেশদ্রোহী, সন্ত্রাসী সমর্থক ইত্যাদি নানা নামে অভিহিত করা হচ্ছে। অনেকে তাঁদের হত্যার হুমকিও দিচ্ছেন। কিন্তু এত প্রতিকূলতার মধ্যেও, এই ‘রিফিউজ়নিক’রা তাঁদের আদর্শের প্রতি অবিচল রয়েছেন।

মেসারভট নামক একটি সংস্থার মতে, যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকজন ইসরায়েলি তরুণ-তরুণী প্রকাশ্যে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকার করেছেন। তবে, এই সংখ্যা আগের বছরগুলোর তুলনায় বেড়েছে।

এছাড়া, অনেকেই আছেন, যাঁরা মানসিক স্বাস্থ্য বা শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়া এড়িয়ে যাচ্ছেন। ইতামার গ্রিনবার্গের মতো প্রতিবাদকারীরা মনে করেন, তাঁদের এই আন্দোলনের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী বার্তা দেওয়া সম্ভব, যা সমাজে সামরিকীকরণের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

গাজা যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। অনেকেই মনে করেন, নেতানিয়াহু তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য গণতন্ত্রবিরোধী পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

তাঁদের ধারণা, গাজায় নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করার ফলে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবন আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে, ‘রিফিউজ়নিক’রা তাঁদের প্রতিবাদের মাধ্যমে তাঁদের মতামত তুলে ধরছেন।

তাঁরা চান, ইসরায়েলের সাধারণ মানুষ তাঁদের এই প্রতিবাদের গুরুত্ব বুঝুক এবং তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াক।

অন্যান্যদের মধ্যে, লিওর ফোগেল নামের এক তরুণী বলেন, সামরিক বাহিনী একটি সহিংস ও জোরজবরদস্তিমূলক প্রতিষ্ঠান। তিনি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কারণ দেখিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেননি।

তাঁর মতে, ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর অবিচার একটি নিয়মিত ঘটনা। এই অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই তাঁর মূল উদ্দেশ্য।

বর্তমানে, ইসরায়েলের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। তাঁরা শান্তি ও সাম্যের পক্ষে তাঁদের আওয়াজ তুলছেন।

তাঁদের আশা, তাঁদের এই প্রতিবাদ সমাজের বৃহত্তর অংশে পরিবর্তন আনবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *