মার্কিন কর্মকর্তাদের গ্রিনল্যান্ড সফর: উদ্বেগে গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের একটি দল গ্রিনল্যান্ড সফরে আসায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মুটে বোরি ইগেদে। বিশেষ করে, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজের সফরকে তিনি ‘আগ্রাসী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন গ্রিনল্যান্ডের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক সময়কার ‘দখলদারিত্বের’ ঘোষণার বিষয়টি আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর মতে, এই সফরটি আসলে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ক্ষমতা প্রদর্শনের একটি কৌশল। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ওয়াল্টজের উপস্থিতি ট্রাম্পের সেই পুরনো আকাঙ্ক্ষাকে আরও উস্কে দেবে। উল্লেখ্য, গ্রিনল্যান্ড একটি স্ব-শাসিত ডেনিশ অঞ্চল, যেখানে বিশাল পরিমাণে বিরল মৃত্তিকা খনিজ (rare earth minerals) মজুদ রয়েছে। এই খনিজগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের স্ত্রী উশা ভ্যান্সও এই সফরে গ্রিনল্যান্ডে এসেছেন। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি গ্রিনল্যান্ডের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উদযাপন এবং জাতীয় ডগসলেড রেস (national dogsled race) উপভোগ করতে এসেছেন।
তবে গ্রিনল্যান্ডের নেতারা মনে করেন, এই সফরের সময় নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনার মধ্যে হওয়াটা ‘শ্রদ্ধার অভাব’ দেখাচ্ছে। তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানেন যে গ্রিনল্যান্ড এখনো ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়ে আলোচনা করছে, এমতাবস্থায় তাদের এই সফর গ্রিনল্যান্ডের জনগণের প্রতি সম্মানের অভাব।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এটিকে একটি সাংস্কৃতিক সফর হিসেবে তুলে ধরছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উশা ভ্যান্স ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করবেন এবং গ্রিনল্যান্ডের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানবেন।
ডেনমার্ক এক সময় গ্রিনল্যান্ডকে উপনিবেশ হিসেবে শাসন করত। ১৯৫৩ সালে গ্রিনল্যান্ড স্বায়ত্তশাসন লাভ করে। ২০০৯ সালে খনিজ সম্পদ, পুলিশ ও বিচার বিভাগের ওপর তারা আরও বেশি ক্ষমতা লাভ করে, তবে নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা নীতি এখনও ডেনমার্কের হাতে। গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (European Union) এবং ন্যাটো’র (NATO) সদস্যপদ উপভোগ করে।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন বলেছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। তিনি জানান, ডেনমার্ক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চায়, তবে তা সার্বভৌমত্বের মৌলিক নীতির ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গ্রিনল্যান্ডের বিরল খনিজ সম্পদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলোর নজর রয়েছে। গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী।
জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, গ্রিনল্যান্ডের ৮৫ শতাংশ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হতে চায় না। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মনে করে, ট্রাম্পের এই আগ্রহ তাদের জন্য হুমকি স্বরূপ।
প্রসঙ্গত, এর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডকে কিনতে চেয়েছিলেন। এমনকি তিনি জোর করে গ্রিনল্যান্ড দখলেরও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রও জানুয়ারিতে গ্রিনল্যান্ড সফর করেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন