নিষিদ্ধ নগরের ধ্বংসাবশেষ: সংস্কারে বিজ্ঞান ও ঐতিহ্যের জাদু!

চীনের নিষিদ্ধ শহরে, যেখানে এক সময়ের সম্রাটদের বসবাস ছিল, সেখানকার ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি পুনরুদ্ধারের এক বিশেষ প্রক্রিয়া চলছে। এই কাজে বিজ্ঞান ও ঐতিহ্যকে একত্রিত করে কাজ করছেন একদল নিবেদিত কর্মী।

বেইজিং-এর প্রাসাদ জাদুঘরে, যা একসময় নিষিদ্ধ শহর নামে পরিচিত ছিল, সেখানে এখন প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং পুনরুদ্ধারকর্মীরা দিনরাত কাজ করছেন। তাদের লক্ষ্য হল ১.৮ মিলিয়নেরও বেশি প্রাচীন নিদর্শনগুলিকে রক্ষা করা, যেগুলির মধ্যে রয়েছে চীন সাম্রাজ্যের সোনালী অতীত-এর সাক্ষী বিভিন্ন শিল্পকর্ম।

নিষিদ্ধ শহরের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াটি একটি ল্যাবরেটরির মতোই, যেখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, তারা ছাদের পুরনো টালিগুলির অবস্থা জানতে এক্স-রে ডিফ্রাকশন মেশিন ব্যবহার করে।

এই মেশিনের মাধ্যমে টালির ভেতরের অবস্থা এবং ক্ষতির কারণগুলি স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে, কর্মীরা বুঝতে পারেন কীভাবে সেগুলির পুনরুদ্ধার করা যায়।

এইসব নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে পুরাতন চিত্রকর্ম, ক্যালিগ্রাফি, ব্রোঞ্জ এবং চীনামাটির পাত্র, এমনকি ইউরোপ থেকে আসা পুরাতন ঘড়িও।

এই পুনরুদ্ধারের কাজটি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও শ্রমসাধ্য। একজন কর্মী, ওয়াং নান, যিনি এই কাজে যুক্ত, তিনি বলেন, “ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি রক্ষার বিশাল স্বপ্ন আমার নেই।

তবে যখন দেখি একটি পুরনো জিনিস পুনরায় তার আগের রূপে ফিরে আসছে, তখন ভালো লাগে।”

নিষিদ্ধ শহরটি একসময় কেবল সম্রাট এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। বর্তমানে এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত এবং সারা বিশ্ব থেকে মানুষ এখানে আসে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র জাপানি সৈন্যদের হাত থেকে বাঁচাতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

চীনের গৃহযুদ্ধের সময়, কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতা লাভের পর, অনেক মূল্যবান শিল্পকর্ম তাইওয়ানে নিয়ে যাওয়া হয়, যা বর্তমানে ন্যাশনাল প্যালেস মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।

প্রাসাদ জাদুঘরের সংরক্ষণ বিভাগের প্রধান কু ফেং-এর মতে, “আমরা যখন একটি প্রাচীন জিনিস পুনরুদ্ধার করি, তখন আমরা তার সাংস্কৃতিক মূল্যকে রক্ষা করি।

এটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।” এই কাজে ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞানও ব্যবহৃত হচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ, ক্ষতিগ্রস্ত রেশমের কাপড়ে “দীর্ঘায়ু” শব্দটি সেলাই করা ছিল, যা কুইং সাম্রাজ্যের শেষ দিকের সম্রাজ্ঞী, সি-সির জন্মদিনের উপহার হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল।

এই ধরনের কাজগুলি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে করা হয়।

ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা শুধু চীনের জন্যই নয়, বরং সারা বিশ্বের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগও আমাদের দেশের ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শনগুলির সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে। যেমন, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার এবং ময়নামতির প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলি আমাদের দেশের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *