আজকের শেয়ার বাজার: এশিয়ার মিশ্র প্রতিক্রিয়া, প্রযুক্তি খাতের উত্থান!

আন্তর্জাতিক বাজারে প্রযুক্তি খাতের শেয়ারের উত্থান-পতনের মধ্যে এশীয় শেয়ারবাজারে মিশ্র প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রযুক্তি নির্ভর শেয়ারের দাম বাড়ায় সেখানকার সূচকে ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারে এর প্রভাব ছিল ভিন্ন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাণিজ্য নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের দিকে এখন সবার নজর। সোমবার এশিয়ার শেয়ার বাজার খোলার পর এমন চিত্র দেখা যায়।

বিনিয়োগকারীরা এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন। খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে এমন দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে, যেখানে এশিয়ার অনেক দেশও রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্ভবত বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে তাঁর আগের কঠোর অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসতে পারেন। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, আগামী ২ এপ্রিলের মধ্যে বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে এর আগেও শুল্ক আরোপের তারিখ একাধিকবার পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং মার্কিন ব্যবসায়ী নেতা এবং সিনেটর স্টিভ ডেইন্সের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন।

উল্লেখ্য, ডেইন্স হলেন ট্রাম্পের একজন গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক এবং ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম কংগ্রেসম্যান যিনি বেইজিং সফর করছেন।

বৈঠকে লি কিয়াং বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও যোগ করেন, দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত, যা উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক হবে।

কোনো পক্ষের ক্ষতির মাধ্যমে নয়, বরং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। চীন আশা করে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে মিলে চীন-মার্কিন সম্পর্কের স্থিতিশীল ও টেকসই উন্নয়নে কাজ করবে।

বৈঠকে ফেডেক্স কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাজ সুব্রামানিয়াম, বোয়িং কোম্পানির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্রেন্ডন নেলসন, কোয়ালকমের সিইও ক্রিস্টিয়ানো আমন এবং ফাইজার-এর সিইও আলবার্ট বোরলাসহ বেশ কয়েকজন মার্কিন শীর্ষ ব্যবসায়ীরও উপস্থিতি ছিল।

বাজার বিশ্লেষক ইগ-এর জুনরং ইয়েপ এক মন্তব্যে বলেন, সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, শুল্কের তালিকায় থাকা দেশগুলো হয়তো সবার জন্য প্রযোজ্য হবে না। এমনকি, ইস্পাতের মতো পণ্যের ওপর বর্তমানে যে শুল্ক রয়েছে, তা হয়তো বাড়ানো নাও হতে পারে।

ফলে, ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা আগের তুলনায় কিছুটা নমনীয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেয়ার বাজারের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ০.৪ শতাংশ বেড়ে ২৩,৭৮৭.৭১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে এবং সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স ০.২ শতাংশ বেড়ে ৩,৩৭০.০৩ পয়েন্টে পৌঁছেছে।

অন্যদিকে, জাপানের টোকিওতে নিক্কেই ২২৫ সূচক ০.২ শতাংশ কমে ৩৭,৬০৮.৪৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। জানা গেছে, জাপানে উৎপাদন খাতের তথ্য প্রকাশে দেখা যায়, গত এক বছরের মধ্যে উৎপাদনের হার সবচেয়ে বেশি কমেছে।

একইসঙ্গে, নতুন অর্ডারের পরিমাণও দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক ১ শতাংশ বেড়ে ৭,৯৩৬.৯০ পয়েন্টে এবং কোরিয়ার কোসপি সূচক ০.৪ শতাংশ কমে ২,৬৩২.০৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

তাইওয়ানের তাইএক্স সূচক ০.৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যেখানে ভারতের সেনসেক্স সূচক ১.৩ শতাংশ বেড়েছে। গত শুক্রবার, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ০.১ শতাংশ বেড়ে ৫,৬৬৭.৫৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছিল, যা সপ্তাহের শেষে ০.৫ শতাংশ লাভ নিয়ে শেষ হয়।

তবে চলতি মাসে সূচকটি এরই মধ্যে ৪.৮ শতাংশ কমেছে। ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ০.১ শতাংশ বেড়ে ৪১,৯৮৫.৩৫ পয়েন্টে এবং নাসডাক কম্পোজিট ০.৫ শতাংশ বেড়ে ১৭,৭৮৪.০৫ পয়েন্টে পৌঁছেছে।

প্রযুক্তি খাতের শেয়ারগুলো ভালো করায় এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের অন্যান্য খাতের লোকসান কিছুটা কমেছে। গত বছর এই খাতের শেয়ারগুলো বাজারের উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

ওয়াল স্ট্রিটে এই খাতের শেয়ারগুলো বেশ মূল্যবান এবং বাজারের ভালো-মন্দ অনেকটাই তাদের ওপর নির্ভর করে। অ্যাপল প্রায় ২ শতাংশ এবং মাইক্রোসফট ১.১ শতাংশ বেড়েছে।

অন্যদিকে, এনভিডিয়া ০.৭ শতাংশ এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এর শেয়ারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে মাইক্রন টেকনোলজি, যার দর পতন হয়েছে ৮ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে শেয়ার বাজারের দর পতন হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ বাড়লে, তা মূল্যস্ফীতি আরও বাড়াতে পারে এবং ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করতে পারে।

মূল্যস্ফীতি ফেডারেল রিজার্ভের ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার উপরে রয়েছে এবং শুল্ক আরোপের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হতে পারে। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাড়ি বিক্রি, শিল্প উৎপাদন এবং বেকারত্বের হার শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

তবে ভোক্তা আস্থা এবং খুচরা বিক্রি সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদনে ভোক্তাদের মধ্যে সতর্কতা বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা শুল্ক, মূল্যস্ফীতি এবং ব্যয়ের ওপর এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

শেয়ার বাজারে মন্দা দেখা দেওয়ায় নতুন অর্ডারের পূর্বাভাস এবং গড় বিক্রয় মূল্য হ্রাসের কারণে নির্মাণ কোম্পানি লেনারের শেয়ারের দর ৪ শতাংশ কমেছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, উচ্চ সুদহার, মূল্যস্ফীতি এবং ভোক্তাদের আস্থা কমে যাওয়ায় আবাসন বাজারে চাপ বাড়ছে।

সোমবার অপরিশোধিত তেলের বেঞ্চমার্ক ইউএস ক্রুড ১ সেন্ট বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৬8.29 ডলারে লেনদেন হয়েছে। আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৩ সেন্ট কমে প্রতি ব্যারেল ৭১.১৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

মার্কিন ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েনের দর ১49.37 থেকে বেড়ে ১49.76 হয়েছে। ইউরোর দর ১.০816 ডলার থেকে বেড়ে ১.০845 ডলারে উঠেছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *