পুরুষের জীবনে নতুন আশা! ক্যান্সার অস্ত্রোপচারে যৌনক্ষমতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা?

পুরুষদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সার একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, এবং অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এর চিকিৎসা অনেক সময় জটিলতা তৈরি করতে পারে। তবে সম্প্রতি, অস্ত্রোপচারের একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে, যা রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

এই পদ্ধতির নাম নিউরোসেফ (NeuroSafe), যা অস্ত্রোপচারের পর পুরুষদের যৌনক্ষমতা ধরে রাখতে সহায়ক হতে পারে। প্রোস্টেট ক্যান্সার চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অস্ত্রোপচার।

এই অস্ত্রোপচারে, ক্যান্সার আক্রান্ত প্রোস্টেট গ্রন্থি অপসারণ করা হয়। তবে অস্ত্রোপচারের সময় কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়, যার মধ্যে একটি হলো পুরুষত্বহীনতা বা ইরেক্টাইল ডিসফাংশন (erectile dysfunction)।

নিউরোসেফ পদ্ধতি এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে। নিউরোসেফ পদ্ধতিতে, অস্ত্রোপচারের সময় প্রোস্টেট গ্রন্থির বাইরের দিকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্নায়ু সংরক্ষণের চেষ্টা করা হয়।

এই স্নায়ুগুলো পুরুষদের যৌনক্ষমতার জন্য জরুরি। অস্ত্রোপচারের সময়, ক্যান্সার কোষ আছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য প্রোস্টেটের টিস্যু পরীক্ষা করা হয়।

যদি পরীক্ষায় দেখা যায় যে ক্যান্সার সম্পূর্ণভাবে সরানো হয়েছে, তাহলে স্নায়ুযুক্ত বাইরের স্তর অক্ষত রাখা হয়, যা রোগীদের যৌনক্ষমতা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা বাড়ায়। যুক্তরাজ্যের পাঁচটি হাসপাতালে চালানো এক গবেষণায় ৩৪৪ জন পুরুষের ওপর নিউরোসেফ পদ্ধতির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়।

যাদের কোনো ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের সমস্যা ছিল না, তাদের এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই রোগীদের অর্ধেককে নিউরোসেফ পদ্ধতিতে এবং বাকি অর্ধেককে প্রচলিত পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করা হয়।

অস্ত্রোপচারের এক বছর পর, যারা প্রচলিত পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশের গুরুতর ইরেক্টাইল ডিসফাংশন দেখা দেয়। অন্যদিকে, নিউরোসেফ পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার হওয়া রোগীদের মধ্যে এই হার ছিল ৩৮ শতাংশ।

এছাড়া, প্রচলিত অস্ত্রোপচারে মাত্র ২৩ শতাংশ রোগীর যৌনক্ষমতা স্বাভাবিক ছিল বা সামান্য সমস্যা ছিল, যেখানে নিউরোসেফ পদ্ধতিতে এই সংখ্যা ছিল ৩৯ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রোস্টেট ক্যান্সারের অস্ত্রোপচার জীবন বাঁচানোর জন্য জরুরি, কিন্তু এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে।

ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি রোগীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। এই গবেষণা সেই দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে, এই পদ্ধতিটি কতটা কার্যকর এবং কাদের জন্য বেশি উপযোগী, তা আরও ভালোভাবে জানতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।

একইসঙ্গে, যুক্তরাজ্যের মতো আমাদের দেশেও এই পদ্ধতি সহজলভ্য করা যায় কিনা, সে বিষয়েও ভাবতে হবে। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লক্ষ পুরুষ প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং এর মধ্যে প্রায় ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

সাধারণত, ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। তাই, এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা জরুরি। তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *