শিক্ষকদের পেনশন: ‘মৃত’ ঘোষণার আতঙ্ক!

শিরোনাম: যুক্তরাজ্যের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পেনশন বিভ্রাট: হয়রানির শিকার প্রবীণ নাগরিকেরা

প্রবীণ নাগরিকদের জীবনযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন হলো পেনশন। কিন্তু যুক্তরাজ্যের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পেনশন স্কিমে মারাত্মক ত্রুটির কারণে বহু অবসরপ্রাপ্ত মানুষ আজ চরম দুর্ভোগের শিকার।

কর্তৃপক্ষ তাঁদেরকে মৃত ঘোষণা করে পেনশন বন্ধ করে দিচ্ছে, এমনটাই অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের ‘টিচার্স পেনশন’ স্কিমের কর্মকর্তাদের ভুলের কারণে জীবিত শিক্ষকদেরও মৃত হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এই ভুলের কারণে অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে এবং তাঁদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।

সরকারি কর্মকর্তাদের ভুল ডেটা এন্ট্রি এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পেনশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক প্রবীণ নাগরিক তাঁদের দৈনন্দিন খরচ, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং মৌলিক চাহিদা মেটাতে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।

পোর্ট ট্যালবটের বাসিন্দা এম.ডব্লিউ নামের একজন শিক্ষক জানান, কর্তৃপক্ষ তাঁকে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে, তিনি জীবিত আছেন কিনা। এমনকি পেনশন বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

এম.ডব্লিউ-এর ভাষায়, “পেনশন আমার প্রধান আয়ের উৎস। হঠাৎ করে পেনশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি।”

আরেকজন শিক্ষক, এল.এস, যিনি মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসে (Multiple sclerosis) আক্রান্ত হয়ে দ্রুত অবসর নিতে বাধ্য হয়েছিলেন, তিনিও তাঁর পেনশন পেতে বিলম্বের শিকার হচ্ছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, তাঁর কর্মজীবনের শেষ দিনের তিন মাসের মধ্যে পেনশন পাওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু এখনো পর্যন্ত তিনি তাঁর প্রাপ্য অর্থ পাননি। এল.এস জানাচ্ছেন, “আমি যখনই টিচার্স পেনশন অফিসে ফোন করি, তখনই একজন ভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়।

তাঁদের কেউই আমার সমস্যার সমাধানে আন্তরিক নন। সবাই আমাকে একেক রকম কথা বলেন।”

বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে ভুল করে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে, এমনটা প্রতিরোধের জন্যই এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।

তবে, তথ্য সুরক্ষা বিষয়ক সংস্থা ‘ইনফরমেশন কমিশনার্স অফিস’ (Information Commissioner’s Office – ICO) জানিয়েছে, কোনো ব্যক্তির সম্পর্কে ভুল তথ্য জেনেও তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন করা ডেটা সুরক্ষা আইন লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও সতর্ক হওয়া উচিত এবং পেনশন স্কিমের ডেটা ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

এছাড়া, প্রবীণ নাগরিকদের প্রতি মানবিক আচরণ করা এবং তাঁদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে শোনা জরুরি। কারণ, একটি সামান্য ভুলের কারণে একজন অবসরপ্রাপ্ত মানুষের জীবন কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *