প্যারিসের বারে কাজ করে জীবন বদলে গেল!

প্যারিসে আসা একজন বিদেশীর নতুন জীবন: একটি বারের অভিজ্ঞতা।

প্যারিসে আসা অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো, কিন্তু সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করাটা বেশ কঠিন হতে পারে। মেগান ক্লেমেন্ট নামের একজন নারী, যিনি ফ্রান্সে এসেছিলেন, তিনিও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। শুরুতে ভাষা এবং সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাকে।

কিন্তু একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার মাধ্যমে তিনি খুঁজে পান নতুন পথের দিশা।

২০১৮ সালে, প্যারিসে আসার দুই বছর পর, মেগান বুঝতে পারছিলেন যে তিনি যেন একটি অচেনা জগতে আটকা পড়েছেন। তিনি ভালোভাবেই জীবন যাপন করছিলেন, তবে মূলত ইংরেজিভাষী বন্ধুদের সঙ্গেই সময় কাটাতেন। আমেরিকান একটি কোম্পানির হয়ে দূর থেকে কাজ করতেন, যা তাকে ফরাসি সমাজের সঙ্গে সেভাবে মিশতে সাহায্য করেনি।

একদিন, তিনি তার এলাকার একটি স্বেচ্ছাসেবক-পরিচালিত বার ‘লে বার কম্যুনে’র (Le Bar Commun) কথা জানতে পারেন। বারটি এলাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষকে একত্রিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। কৌতূহলবশত, তিনি সেখানে কিছু সময়ের জন্য পান পরিবেশন এবং পনির প্লেট সাজানোর কাজ করার জন্য রাজি হন।

কাজটি ছিল পুরোটাই ফরাসি ভাষায়।

প্রথম কয়েক দিন ছিল ভীতিকর। বারের কাজে ব্যবহৃত অনেক ফরাসি শব্দ, যেমন – ‘মশুয়ার’ (টিস্যু), ‘তোর্শোঁ’ (চা-তোয়ালে), ‘এ সুই-তু’ (রান্নাঘরের তোয়ালে) – তাঁর কাছে ছিল সম্পূর্ণ অপরিচিত। যখন কেউ কিছু চাইত, তখন তিনি দ্রুত রান্নাঘরে যেতেন এবং গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্য নিয়ে সেগুলোর মানে বুঝে ফিরে আসতেন।

একবার, এক গ্রাহক ‘পাইল’ (স্ট্র) চাইলে, তিনি বুঝতে না পেরে কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলেন। পরে গ্রাহক যখন বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন, তখন দুজনেই লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলেন।

ধীরে ধীরে, মেগানের ফরাসি ভাষার দক্ষতা বাড়তে শুরু করে। তিনি এখন আর গ্রাহকদের থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখেন না। বারে কাজ করার সুবাদে তিনি ফরাসি সংস্কৃতি সম্পর্কেও অনেক কিছু জানতে পারেন।

একসময় যখন তাকে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব নিতে বলা হলো, তখন আত্মবিশ্বাসের অভাবে প্রথমে রাজি হননি। তবে সহকর্মীদের উৎসাহে তিনি সেই দায়িত্ব নিতে রাজি হন।

বার-এর কাজটি মেগানকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, ফরাসি বলার সময় নিজের ভুল নিয়ে হতাশ না হওয়া। বারের স্বেচ্ছাসেবক এবং গ্রাহকরা তাকে যেমন ছিলেন, সেভাবেই গ্রহণ করেছিলেন, যা তাকে নিজের ভুলগুলো শুধরে নিতে সাহায্য করেছে।

বর্তমানে মেগান ‘লে বার কম্যুনে’ কাজ করেন না। তিনি এখন ফরাসি নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে কাজ করেন এবং দেশটির নারী আন্দোলনের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেন। সাহিত্য উৎসবে দ্বিভাষিক প্যানেল পরিচালনা করেন এবং একটি কমিউনিটি গার্ডেনিং গ্রুপেও যোগ দিয়েছেন।

বর্তমানে তিনি ফ্রান্সের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন।

মেগানের এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, একটি নতুন সংস্কৃতিতে মিশে যেতে ভাষার পাশাপাশি প্রয়োজন হয় আত্মবিশ্বাস এবং সমাজের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়া।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *