বিশ্বজুড়ে আবারও বাড়ছে হামের প্রকোপ, যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, হামের সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে এবং এর মূল কারণ হলো টিকাকরণের হার কমে যাওয়া।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাম এখন আর ‘বিমানের দূরত্বে’ সীমাবদ্ধ নেই। কারণ, বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে একজন টিকা না নেওয়া ব্যক্তি এই রোগ নিয়ে দেশে ফিরতে পারেন।
সম্প্রতি, টেক্সাস, নিউ মেক্সিকো এবং ওকলাহোমা রাজ্যে হামের প্রকোপ দেখা দিয়েছে, যেখানে আক্রান্তদের অনেকেরই ভ্রমণের ইতিহাস নেই। এর অর্থ হলো, স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
মিশিগান, ভারমন্ট এবং হিউস্টনেও ভ্রমণ থেকে ফিরে আসা কিছু মানুষের শরীরে হামের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইউরোপে গত ২৫ বছরের মধ্যে হামের সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুধু তাই নয়, গত বছর বিশ্বজুড়ে ৫৬টির বেশি দেশে হামের বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে।
এই পরিস্থিতিতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা করছে, হামের কারণে শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরো বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হওয়ায় অনেক দেশে হামের টিকাকরণের হার কমে গেছে। এর ফলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়া শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উন্নত দেশগুলোতেও টিকা নিতে অনীহা দেখা যাচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ।
এ অবস্থায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, হাম প্রতিরোধের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি। হাম শনাক্তকরণ এবং এর বিস্তার রোধে গবেষণাগারগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।
কিন্তু, বিশ্ব স্বাস্থ্য খাতে অর্থ বরাদ্দ কমানোর কারণে এই কার্যক্রমগুলোও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, হাম একটি পরিচিত রোগ। শিশুদের মধ্যে হামের সংক্রমণ কমাতে সরকার নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইপিআই (Expanded Programme on Immunization) কর্মসূচির আওতায় শিশুদের বিনামূল্যে হামের টিকা দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে হামের বিস্তার বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। বিদেশ থেকে আসা মানুষের মাধ্যমে দেশে এই রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।
তাই, টিকাকরণের ওপর জোর দেওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং দ্রুত রোগ শনাক্তকরণের মাধ্যমে হামের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
অতএব, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় টিকাকরণের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রত্যেক অভিভাবকের উচিত, শিশুদের নিয়মিত টিকা দেওয়া এবং হামের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
তথ্য সূত্র: সিএনএন