সৌদি আরবে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিরতি ও শস্য চুক্তি পুনরুদ্ধারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো স্থান পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী) দুপুরে রিয়াদে এই আলোচনা শুরু হয়।
আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ বন্ধের একটি উপায় খুঁজে বের করা। এর পাশাপাশি কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য সরবরাহ চুক্তি পুনরায় চালু করা এবং বেসামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা বন্ধের বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। রাশিয়ার পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির ফেডারেল নিরাপত্তা সার্ভিসের (এফএসবি) অভিজ্ঞ সের্গেই বেসেদা এবং সাবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত গ্রিগরি কারাসিন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ।
উইটকফ এক সাক্ষাৎকারে জানান, সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফল পাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে কৃষ্ণ সাগরে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতি আসতে পারে এবং এর মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে যুদ্ধ বন্ধের একটি পথ তৈরি হতে পারে।
তবে, ক্রেমলিন আলোচনার ফল নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়। তাদের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘আমরা কেবল পথচলার শুরুতেই আছি। সামনে কঠিন আলোচনা অপেক্ষা করছে।’
এর আগে, গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একটি সীমিত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিলেন। এই চুক্তিতে উভয়পক্ষ তাদের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা না করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
আলোচনায় কী বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে?
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজ সিবিএস নিউজকে জানান, ‘আমরা এখন কৃষ্ণ সাগরে নৌ-যুদ্ধবিরতি নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি, যাতে উভয়পক্ষ শস্য, জ্বালানি সরবরাহ করতে পারে এবং পুনরায় বাণিজ্য শুরু করতে পারে।’
ক্রেমলিনের মুখপাত্রও জানিয়েছেন, ২০২২ সালের কৃষ্ণ সাগর শস্য চুক্তি পুনরায় চালুর বিষয়টি আলোচনার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হবে।
প্রসঙ্গত, রাশিয়া গত বছর তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় হওয়া এই চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। তাদের অভিযোগ ছিল, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার কৃষি পণ্য ও সারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে ব্যর্থ হয়েছে।
আলোচনায় আরও যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
- যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার পদ্ধতি এবং সীমান্ত চিহ্নিতকরণ।
- যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি ও বেসামরিক বন্দিদের ফিরিয়ে আনা।
- জোরপূর্বক স্থানান্তরিত শিশুদের ফিরিয়ে দেওয়া।
অন্যদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন, কারা যুদ্ধবিরতি ঘোষণার নির্দেশ দেবে এবং কে বা কারা এর লঙ্ঘনকারী হবে, তা কিভাবে নির্ধারণ করা হবে।
এছাড়া, ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ এবং দেশটির সামরিক অভিযান স্থগিত করার দাবিও জানিয়েছে রাশিয়া।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই শান্তি আলোচনার কারণে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হয়েছে। ইউরোপীয় নেতারা নিরাপত্তা গ্যারান্টি চেয়েছেন, কিন্তু ট্রাম্প তাদের উদ্বেগকে সেভাবে আমলে নেননি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার একটি ‘ঐকমত্যের জোট’ তৈরির প্রস্তাব করেছিলেন, যারা শান্তির শর্ত তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পেশ করবে। তবে, ট্রাম্পের বিশেষ দূত উইটকফ এই জোটকে ‘লোক দেখানো’ বলে মন্তব্য করেছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা