গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে (DRC) চলমান সংঘর্ষের ফলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, দেশটির পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর লড়াই মারাত্মক রূপ নিয়েছে।
আফ্রিকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত DRC-তে দীর্ঘদিন ধরেই অস্থিরতা বিরাজ করছে। এখানকার খনিজ সম্পদ দেশটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, তা প্রায়ই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সহিংসতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, দেশটিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৭ মিলিয়নের বেশি।
এদের মধ্যে কেবল উত্তর ও দক্ষিণ কিভু প্রদেশেই বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৩৮ লক্ষ মানুষ।
সংঘর্ষের মূল কারণ হল এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীটি মূলত প্রাক্তন কঙ্গোলিজ সৈনিকদের নিয়ে গঠিত, যাদের অধিকাংশই তুতসি সম্প্রদায়ের। ২০১৪ সালে এই গোষ্ঠীটি গঠিত হয় এবং তারা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে রুয়ান্ডার সমর্থন রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যদিও রুয়ান্ডা সরকার তা অস্বীকার করেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকে ১ লক্ষেরও বেশি মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে ৬৯ হাজার মানুষ বুরুন্ডিতে, ২৯ হাজার উগান্ডায় এবং প্রায় ১ হাজার রুয়ান্ডা ও তানজানিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে।
ডিসেম্বর মাস থেকে সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়েছে। মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর জন্য গোমা শহরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, তবে সেখানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
বিদ্রোহীদের আক্রমণের কারণে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী লুটপাট হওয়ায় ত্রাণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, DRC-এর প্রায় আড়াই কোটি মানুষ বর্তমানে খাদ্য সংকটে ভুগছে। খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এম২৩ বিদ্রোহীদের সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করা না হলে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে বাস্তুচ্যুত মানুষ এবং খাদ্য সংকটে থাকা মানুষদের সহায়তা করা যায়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা