গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের “স্বেচ্ছায় চলে যাওয়া” কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে একটি নতুন সরকারি সংস্থা তৈরি করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। সম্প্রতি ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা এই পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর একজন মুখপাত্র সোমবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, এই প্রস্তাবটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ উত্থাপন করেছিলেন।
নতুন এই সংস্থার কাজ হবে, গাজার বাসিন্দাদের “নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত উপায়ে তৃতীয় কোনো দেশে স্বেচ্ছায় চলে যেতে” সহায়তা করা। মুখপাত্র আরও জানান, যারা গাজা ত্যাগ করতে ইচ্ছুক, তাদের ইসরায়েলি ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘দৃষ্টিভঙ্গির’ সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই সুযোগ দেওয়া হবে।
তবে ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এটিকে জাতিগত নিধন বা ‘এথনিক ক্লিনজিং’-এর শামিল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তাদের মতে, গাজায় বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে সেখানকার বাসিন্দাদের ‘স্বেচ্ছায়’ দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।
এর আগে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজার বাসিন্দাদের মিশর ও জর্ডানের মতো দেশগুলোতে পুনর্বাসনের প্রস্তাব করেছিলেন। এমনকি তিনি গাজাকে একটি ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’-য় পরিণত করারও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
ফিলিস্তিনি এবং আরব দেশগুলো ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলি জাতীয়তাবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে বিতাড়িত করতে চাইছে।
হামাসের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের কারণে তারা এখন এই বিষয়ে আরও বেশি সক্রিয় হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসরায়েল সরকারের বিরুদ্ধে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনেছে, যা সেখানকার বাসিন্দাদের দেশ ছাড়তে উৎসাহিত করছে।
ইসরায়েলের শান্তি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ‘পিস নাও’ এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করে একে ‘ইসরায়েলের জন্য কলঙ্ক’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, বোমা হামলা ও অবরোধের কারণে যখন একটি জায়গার জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, তখন সেখানকার মানুষ স্বেচ্ছায় সেই জায়গা ত্যাগ করে না।
যদিও এই বিষয়ে মিশরসহ অন্যান্য আরব দেশগুলো সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে তারা বরাবরই এই সংঘাতের ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’-এর ওপর জোর দিয়েছে এবং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা