ফেরারির দুঃস্বপ্ন! চীনা গ্রাঁ প্রিঁতে এমনটা কেন হলো?

ফর্মুলা ওয়ান (F1) রেসিংয়ে ফেরারী দলের জন্য চীনের গ্র্যান্ড প্রিক্স দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে। এই প্রতিযোগিতায় তাদের দুই চালক লুইস হ্যামিল্টন ও চার্লস লেক্লার্ককে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

হ্যামিলটনের গাড়ির ফ্লোরের নিচে থাকা ‘স্কিড ব্লক’-এর (গাড়ির নিচের অংশ) ঘর্ষণ সীমা অতিক্রম করার কারণে এবং লেক্লার্কের গাড়ির ওজন নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে ১ কেজি কম থাকার কারণে এই সিদ্ধান্ত আসে।

চীনের এই গ্র্যান্ড প্রিক্সে এমন বিপর্যয়ের আগে, হ্যামিল্টন শনিবারের স্প্রিন্ট রেসে পোল পজিশন অর্জন করে প্রথম স্থানও জয় করেন। ফলে দলের মধ্যে দারুণ উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল।

কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। রেসের আগে ফেরারী দলের গাড়ির সেটিংসে কিছু পরিবর্তন আনা হয়, যা হ্যামিলটনের মতে ভুল ছিল।

রেসের ফলাফলের দিকে তাকালে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। কোয়ালিফাইংয়ে হ্যামিল্টন ও লেক্লার্ক যথাক্রমে পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে ছিলেন। রেসে হ্যামিল্টন শুরু থেকেই গতির সাথে তাল মেলাতে সমস্যা অনুভব করেন।

তিনি এমনকি লেক্লার্ককে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। নতুন টায়ার ব্যবহার করেও হ্যামিলটনের গতির তেমন উন্নতি হয়নি এবং তারা কেউই শীর্ষস্থানীয় চালকদের ধারে কাছেও ছিলেন না।

রেস শেষে, কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত ফেরারী দলের জন্য আরও বড় ধাক্কা হয়ে আসে। অযোগ্য ঘোষণার ফলে দল ১৮ পয়েন্ট হারায়।

মাত্র দুটি রেসের পরেই তারা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন, ম্যাকলারেনের থেকে ৬১ পয়েন্ট এবং উইলিয়ামসের সমান অবস্থানে চলে এসেছে। ফেরারী এটিকে একটি ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি তাদের জন্য মোটেও কাম্য নয়, বিশেষ করে যখন তারা শিরোপা জয়ের জন্য লড়াই করার পরিকল্পনা করছে। এর আগে ২০২৩ সালের ইউএস গ্র্যান্ড প্রিক্সেও হ্যামিল্টন ও লেক্লার্ককে একই কারণে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল।

তখন তাদের গাড়ির ‘স্কিড ব্লক’-এ অতিরিক্ত ঘর্ষণ দেখা গিয়েছিল।

ফেরারী দলের প্রধান, ফ্রেড ভ্যাসার মনে করেন, দলের প্রত্যেককে গাড়ির প্রতিটি বিষয়ে সর্বোচ্চ সীমা বজায় রাখতে হবে। ওজন, ‘স্কিড ব্লক’, কুলিং এবং জ্বালানির ক্ষেত্রে তাদের আগ্রাসী হতে হবে।

তবে এই আগ্রাসী মনোভাব অনেক সময় ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

ভ্যাসার এবং তার দলের ওপর এখন জাপানে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী রেস পর্যন্ত কঠিন চাপ থাকবে। দলের প্রধান হিসেবে ভ্যাসারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল শান্ত ও স্থিতিশীল নেতৃত্ব।

তিনি দলের সদস্যদের মধ্যে দোষারোপের সংস্কৃতি দূর করতে এবং তাদের ভালো পারফর্ম করার সুযোগ তৈরি করতে সচেষ্ট ছিলেন। লেক্লার্ক মনে করেন, এই দিকটি দলের জন্য বিশাল পরিবর্তন এনেছে।

এই ধাক্কা সামলে ওঠা ফেরারী দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বুঝতে হবে, কেন এমনটা ঘটল এবং কীভাবে এর সমাধান করা যায়। দল কি ম্যাকলারেন, মার্সিডিজ ও রেড বুলের কাছাকাছি আসার জন্য অতিরিক্ত চেষ্টা করছিল?

তাদের গাড়ির পারফরম্যান্সের ওঠানামা কি টায়ারের ওপর নির্ভরশীল? এমন অনেক প্রশ্ন এখন তাদের সামনে।

অতীতে, এ ধরনের পরিস্থিতি ফেরারী দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল তৈরি করেছে। তাই মৌসুমের এই কঠিন শুরু তাদের জন্য একটি বড় পরীক্ষা। দল হিসেবে তাদের এখন নতুন করে মনোযোগ দিতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *