ভ্রমণ হোক পরিবেশবান্ধব: টেকসই ভ্রমণের শুরুটা কীভাবে করবেন?
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রকৃতির উপর এর প্রভাব এখন একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। কার্বন নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে, যা আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।
এমন পরিস্থিতিতে, ভ্রমণের ধরনে পরিবর্তন আনা জরুরি। পরিবেশের ক্ষতি না করে কিভাবে ভ্রমণ করা যায়, সেই বিষয়ে কিছু ধারণা দেওয়া হলো।
টেকসই ভ্রমণ (Sustainable Travel) মানে হলো এমনভাবে ভ্রমণ করা, যা পরিবেশের উপর কম প্রভাব ফেলে এবং স্থানীয় সংস্কৃতি ও অর্থনীতির উন্নতিতে সহায়ক হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো ভ্রমণের ভালো দিকগুলো বজায় রেখে খারাপ প্রভাবগুলো কমানো বা একেবারে দূর করা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে, বিজ্ঞানীরা একে ‘সংকটপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে না পারলে পৃথিবীর জন্য তা বিপদ ডেকে আনবে।
তাই, এই দশকে আমাদের সচেতন হতে হবে।
তাহলে, আপনি কিভাবে শুরু করবেন?
১. হালকা ওজনের জিনিস নিন:
কম জিনিস নিলে ভ্রমণের সময় তা বহন করতে সুবিধা হয়। এতে যানবাহনের জ্বালানি খরচও কম হয়।
২. জিনিসপত্র পুনর্ব্যবহার করুন:
কম জিনিস নেওয়ার পাশাপাশি, যেগুলো নিচ্ছেন, সেগুলো যেন পুনরায় ব্যবহার করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, যেমন বোতল, ব্যাগ, স্ট্র-এর পরিবর্তে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য জিনিস নিন।
৩. ভ্রমণের মাধ্যম:
বিমান ভ্রমণের কারণে কার্বন নিঃসরণ অনেক বেশি হয়। ট্রেনের মাধ্যমে ভ্রমণ করলে কার্বন নিঃসরণ তুলনামূলকভাবে কম হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইউকে-তে ট্রেনে ভ্রমণ করলে বিমানের তুলনায় ছয় গুণ কম কার্বন নির্গত হয়।
৪. গন্তব্য নির্বাচন:
আপনার গন্তব্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতন হোন। এমন স্থান নির্বাচন করুন, যেখানে পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ইউরোপের কিছু শহর, যেমন ব্রিস্টল, অ্যাঞ্জার্স, নান্টেস, জুরিখ, লিয়ুবলিয়ানা এবং কোপেনহেগেন পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের জন্য আদর্শ।
৫. স্থানীয় খাবার গ্রহণ করুন:
ভ্রমণের সময় স্থানীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে স্থানীয় অর্থনীতিতে সহায়তা করা যায়, সেইসাথে পরিবেশের উপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
৬. আবাসনের পছন্দ:
হোটেলে থাকার সময় পরিবেশ-বান্ধব হোটেল বেছে নিন। আজকাল অনেক হোটেল পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেকসই ভ্রমণ:
বাংলাদেশেও টেকসই পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে। সুন্দরবন, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সময় পরিবেশ রক্ষার কথা মাথায় রাখা উচিত। স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে পর্যটন করলে তা টেকসই হবে।
মনে রাখতে হবে, টেকসই ভ্রমণ কোনো একদিনের কাজ নয়, বরং এটি একটি মানসিকতা। এটি ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিণত করতে হয়।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক