তুরস্কে বিরোধী বিক্ষোভ, ১,১০০ জনের বেশি আটক, এরদোগানের নিশানায় বিরোধী দল
তুরস্কে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে ১,১০০ জনের বেশি মানুষকে আটক করেছে পুলিশ। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এই বিক্ষোভের জন্য সরাসরি বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টিকে (সিএইচপি) দায়ী করেছেন।
গত বুধবার ইস্তাম্বুলের মেয়র ইমামোগলুকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পরেই তুরস্কের বিভিন্ন শহরে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ এবং ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। বিক্ষোভ ধীরে ধীরে তুরস্কের বিভিন্ন প্রদেশে ছড়িয়ে পরে। নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও জল কামান ব্যবহার করে।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়েরলিকায়া সোমবার এই আটকের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এরদোগান এক বিবৃতিতে সিএইচপিকে “সহিংসতা উস্কে দেওয়ার” জন্য অভিযুক্ত করেছেন এবং বলেছেন, এই “নোংরা খেলা” একদিন শেষ হবে।
ইস্তাম্বুল থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক আকসেল জাইমোভিক জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের ঘটনা বিক্ষোভকারীদের মনোবল ভাঙতে পারেনি। তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং সরকারপন্থী মিডিয়া ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা কোম্পানিগুলোর প্রতি বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছে।
মেয়র ইমামোগলুকে এরদোগানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা হয়। যিনি ২০০৩ সাল থেকে তুরস্কের রাজনীতিতে প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছেন। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং পরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
যদিও তুরস্ক সরকার বলছে, ইমামোগলুর গ্রেপ্তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয় এবং আদালতের স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু বিরোধীরা মনে করেন, আসন্ন নির্বাচনে এরদোগানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেওয়ায় ইমামোগলুকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
রবিবার, ৫৩ বছর বয়সী ইমামোগলুকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং দুর্নীতির অভিযোগে বিচারের জন্য ইস্তাম্বুলের একটি কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়াও, তার বিরুদ্ধে “সন্ত্রাসবাদের” অভিযোগ আনা হলেও, তা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। একই দিনে, প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ তাকে সমর্থন জানিয়ে সিএইচপির প্রার্থী হিসেবে ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দেয়।
এদিকে, সোমবার ভোরে পুলিশ অন্তত ১০ জন সাংবাদিককে তাদের বাড়ি থেকে আটক করেছে। মিডিয়া অ্যান্ড ল’ স্টাডিজ অ্যাসোসিয়েশন (এমএলএসএ) জানিয়েছে, আটককৃত সাংবাদিকদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে এবং তাদের আগামীকাল আদালতে পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
বিক্ষোভের কারণে এখন পর্যন্ত ১২৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করছে।
তথ্য সূত্র: