ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর ট্রাম্পের চরম হুঁশিয়ারি: ২৫% শুল্ক!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত: ভেনেজুয়েলা থেকে তেল কিনলে ২৫ শতাংশ শুল্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ভেনেজুয়েলা থেকে তেল বা গ্যাস ক্রয় করলে দেশগুলোর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। আগামী ২ এপ্রিল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি বন্ধ করা এবং দেশটির ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা।

সোমবার সকালে ট্রুথ সোশাল পোস্টে ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন। সেখানে তিনি ভেনেজুয়েলার সরকার এবং দেশটির অভিবাসন নীতির তীব্র সমালোচনা করেন।

ট্রাম্পের মতে, ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বৈরী আচরণ করে এবং তাদের স্বাধীনতা হরণ করতে চায়। তাই, যারা ভেনেজুয়েলা থেকে তেল কিনবে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্কের মাধ্যমে ট্রাম্প একদিকে যেমন ভেনেজুয়েলাকে চাপে ফেলতে চাইছেন, তেমনই তার প্রধান প্রতিপক্ষ চীনকেও একটি বার্তা দিতে চাইছেন। চীন বর্তমানে ভেনেজুয়েলার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা।

হোয়াইট হাউজের এক বৈঠকে ট্রাম্প আরও জানান, তিনি ওষুধ, গাড়ি এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপরও শুল্ক আরোপ করতে পারেন। এর আগে, ট্রাম্পের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুডনিক বলেন, ২ এপ্রিল থেকে এই শুল্ক আরোপ শুরু হলে, এটি হবে ‘আমেরিকার মুক্তির দিন’।

তিনি আরও জানান, এই দিন থেকে একটি নতুন সংস্থা ‘এক্সটারনাল রেভিনিউ সার্ভিস’ শুল্ক এবং অন্যান্য আমদানি কর আদায়ের কাজ শুরু করবে। তবে সমালোচকরা বলছেন, শুল্ক আদায়ের কাজটি বর্তমানে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের অধীনে কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন বিভাগই করে থাকে।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে তার দীর্ঘমেয়াদী চাপ সৃষ্টির একটি অংশ। এর আগে, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করেন এবং দেশটির সরকারের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি, ট্রাম্প মাদুরোকে গ্রেফতারের জন্য ১ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন।

জবাবে মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রকে তার দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য অভিযুক্ত করেন এবং দেশটির অর্থনৈতিক সংকটের জন্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেন।

ভেনেজুয়েলার তেলের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে, যা দেশটির অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ভেনেজুয়েলার ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছেন।

যদিও ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের বিশেষ দূত রিচার্ড গ্রেনেল মাদুরোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত অভিবাসীদের গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন। এর ফলস্বরূপ, ভেনেজুয়েলা অভিবাসীদের গ্রহণ করতে রাজি হয়।

তবে ট্রাম্প মানবাধিকারের কারণ দেখিয়ে ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক উৎপাদন আরও সীমিত করতে চাইছেন। উদাহরণস্বরূপ, ফেব্রুয়ারিতে তিনি তেল কোম্পানি শেভরনকে দেওয়া লাইসেন্স বাতিল করার কথা জানান, যা তাদের ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানির সঙ্গে কাজ করার অনুমতি দিয়েছিল।

শেভরনকে আগামী ২৭ মে’র মধ্যে ভেনেজুয়েলার কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্প তার পোস্টে ভেনেজুয়েলাকে অভিবাসন সংকটের জন্য দায়ী করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, ভেনেজুয়েলা ইচ্ছাকৃতভাবে ‘আন্ডার কভার’-এ হাজার হাজার অপরাধীকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে।

তাদের মধ্যে অনেকে খুনি এবং সহিংস প্রকৃতির বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই অভিবাসন এবং অপরাধকে এক করে দেখছেন।

ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক সংকট এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের কারণে প্রায় ৭৭ লক্ষ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ট্রাম্পের এই শুল্কের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য উচ্চ মূল্যের কারণ হতে পারে। কারণ, এর ফলে চীন, স্পেন, ব্রাজিল এবং তুরস্কের মতো দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যারা ভেনেজুয়েলার তেল কেনে।

যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের মতে, ভেনেজুয়েলার তেল উৎপাদন গত এক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০০০ সালে দৈনিক ৩.২ মিলিয়ন ব্যারেল থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তা ৭ লক্ষ ৩৫ হাজারে নেমে এসেছে।

ওপেক-এর (Organization of the Petroleum Exporting Countries) হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৬৮ কোটি মার্কিন ডলার।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *