ট্রাম্প প্রশাসনের গোপন যুদ্ধ পরিকল্পনা, মারাত্মক ভুল!

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের গোপন সামরিক পরিকল্পনা, অনিচ্ছাকৃতভাবে ফাঁস করলেন সাংবাদিক

ওয়াশিংটন, [আজকের তারিখ]। হোয়াইট হাউজের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের মধ্যেকার একটি গোপন আলোচনা, যেখানে ইয়েমেনে হাউছি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল, তা অনিচ্ছাকৃতভাবে ফাঁস হয়ে গেছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সদস্য।

জানা গেছে, তাঁরা একটি সুরক্ষিত মেসেজিং অ্যাপ, সিগন্যালের মাধ্যমে এই গোপন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছিলেন।

গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঘটনা

ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন আটলান্টিক ম্যাগাজিনের সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গ, একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার শিকার হন। তিনি “Houthi PC Small Group” নামের একটি সিগন্যাল চ্যাট গ্রুপে যুক্ত হন। পরে তিনি জানতে পারেন, এই গ্রুপে ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও রয়েছেন।

এই গ্রুপের আলোচনায় ছিল ইয়েমেনে সামরিক অভিযান পরিচালনার বিস্তারিত পরিকল্পনা।

আলোচনায় ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা এবং গোয়েন্দা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটার হেগসেথ, এবং জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক, এমন কী মার্কো রুবিও’র মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও।

এছাড়াও, এই গ্রুপে ট্রাম্পের উপদেষ্টা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও ছিলেন।

নিরাপত্তার গুরুতর ত্রুটি

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত সিগন্যাল অ্যাপটিকে গোপনীয় তথ্য আদান-প্রদানের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এই ঘটনা নিরাপত্তা লঙ্ঘনের একটি গুরুতর দৃষ্টান্ত, যা দেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

গোল্ডবার্গ তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, তিনি দ্রুত ওই চ্যাট থেকে সংবেদনশীল তথ্য সরিয়ে ফেলেন। এর মধ্যে একজন শীর্ষস্থানীয় সিআইএ অফিসারের পরিচয় এবং সামরিক অভিযানের কিছু গোপন বিষয়ও ছিল।

হোয়াইট হাউজের প্রতিক্রিয়া

ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, “মনে হচ্ছে, এটি একটি আসল বার্তা আদান-প্রদানের ঘটনা, এবং কীভাবে একজন অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি এই চেইনে যুক্ত হলেন, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।”

হিউজ আরও যোগ করেন, “এই ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে গভীর এবং সুচিন্তিত নীতি সমন্বয়ের প্রমাণ। হাউছি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে, যা প্রমাণ করে যে এতে সেনা বা জাতীয় নিরাপত্তার কোনো ঝুঁকি ছিল না।”

আলোচনার বিষয়বস্তু

গোল্ডবার্গের দেখা আলোচনায় ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্সকে ইয়েমেনে হামলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এছাড়াও, ইউরোপীয় দেশগুলো এবং অন্যান্য মিত্রদের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পথ রক্ষার জন্য কত খরচ নেওয়া হবে, সেই বিষয়েও আলোচনা হয়।

মার্কিন সামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা এই ধরনের গোপনীয়তা লঙ্ঘনকে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন। কারণ, সাধারণত সরকারি কর্মকর্তারা গোপন তথ্য আদান-প্রদানের জন্য বাণিজ্যিক চ্যাট পরিষেবা ব্যবহার করেন না। তাছাড়া, একজন সাংবাদিককে এভাবে অন্তর্ভুক্ত করাটাও ছিল অপ্রত্যাশিত।

ডেমোক্রেটিক প্রতিনিধি এবং সেনা অভিজ্ঞ প্যাট রায়ান এই ঘটনাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের একটি শব্দ ব্যবহার করে বর্ণনা করেছেন, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনার জেরে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলোর মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, যখন হেগসেথ “শতভাগ নিরাপত্তা” নিশ্চিত করার কথা বলছিলেন, ঠিক তখনই একজন সাংবাদিক তাঁর বার্তা পড়ছিলেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, এর ফলে মিত্র দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আস্থা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *