যুদ্ধ পরিকল্পনার গোপন মেসেজ, ট্রাম্প প্রশাসনের চাঞ্চল্যকর কাণ্ড!

শীর্ষ পদে অযোগ্য লোক নিয়োগ, ট্রাম্প প্রশাসনের গোপন সামরিক পরিকল্পনা ফাঁস!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের গোপন সামরিক পরিকল্পনা বিষয়ক তথ্য আদান-প্রদান নিয়ে গুরুতর বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, দেশের নিরাপত্তা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে এমন একটি মেসেজিং অ্যাপে, যা সুরক্ষিত নয়। এই ঘটনায় ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন *দ্য আটলান্টিক* পত্রিকার সাংবাদিক জেফরি গোল্ডবার্গ-কে একটি মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে সামরিক পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য পাঠানো হয়। এই গ্রুপে ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভেন্স, সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্কো রুবিও, প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান পিট হেগসেথ, জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক তুলসি গাব্বার্ড, কোষাধ্যক্ষ স্কট বেসেন্ট, হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার এবং সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ-এর মতো শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা যুক্ত ছিলেন। এই তথ্যগুলো পাঠানো হয়েছে এমন একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে, যিনি আগে ফক্স নিউজের উপস্থাপক ছিলেন এবং সরকারি পদে তেমন কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।

আলোচনায় ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক অভিযান নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। জানা যায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভেন্স এই ধরনের অভিযানের বিরোধিতা করেছিলেন। তার মতে, সুয়েজ খালের উপর যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ইউরোপের বাণিজ্য বেশি নির্ভরশীল, তাই এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ইউরোপের লাভ বেশি হবে।

গোল্ডবার্গ প্রথমে বিষয়টি নিছক একটি কৌশল বা উপহাস হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। কিন্তু যখন তিনি বিস্তারিত সামরিক পরিকল্পনা এবং আক্রমণের সময়সূচী পান, তখন তিনি ঘটনার গভীরতা বুঝতে পারেন। পরে তিনি জানতে পারেন, সত্যিই ওই সময়ে সামরিক অভিযান চালানো হয়েছিল।

প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এমন একটি মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করছিলেন, যেখানে বার্তাগুলো মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে? এছাড়া, এই ধরনের আলোচনা গোপন রাখার জন্য যে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে, তা কেন মানা হয়নি? বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ একদিকে যেমন তথ্যের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ায়, তেমনি সরকারি নথিপত্র সংরক্ষণেও সমস্যা সৃষ্টি করে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ট্রাম্প প্রশাসন তার কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার চেয়ে আনুগত্যকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। অতীতেও এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যেখানে কর্মকর্তাদের অদক্ষতার কারণে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পারমাণবিক নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার একটি চেষ্টা করা হয়েছিল, যা পরে বাতিল করতে হয়।

এই ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এই নিরাপত্তা লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা। সাধারণত, এমন ঘটনার ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয় অথবা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে, বর্তমানে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এই বিষয়ে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত হবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

এই ঘটনার জেরে ট্রাম্পের দ্বৈত নীতির বিষয়টিও সামনে এসেছে। অতীতে, হিলারি ক্লিনটন যখন ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহার করেছিলেন, তখন ট্রাম্প এর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। এখন, তার প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একই ধরনের কাজ করতে দেখা যাচ্ছে।

*দ্য আটলান্টিক* এবং সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘটনাগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের দুর্বলতাকেই তুলে ধরে, যা দেশের নিরাপত্তা এবং সরকারি কাজের পদ্ধতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন সৃষ্টি করে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *