ট্রাম্পের বিতর্ক: অভিবাসী বিতাড়নে ‘শ’ত্রু আইন’ ব্যবহারের চেষ্টা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নেয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আপিল আদালতে শুনানি চলছে। এই শুনানিতে বিতর্কিত ‘এলিযেন এনিমিজ অ্যাক্ট’ ব্যবহারের মাধ্যমে অভিবাসীদের বিতাড়িত করার সিদ্ধান্তের আইনি বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।

এই আইনের অধীনে, ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছে, যা নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক প্রশ্ন উঠেছে।

আদালতে শুনানিতে বিচারকদের মধ্যে মতভেদ দেখা গেছে। বিচারক প্যাট্রিসিয়া মিলেট এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি উল্লেখ করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদেরও এই আইনের অধীনে যতটুকু সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, বর্তমানে বিতাড়িত হওয়া অভিবাসীদের ক্ষেত্রে সেই ন্যূনতম অধিকারও নিশ্চিত করা হয়নি।

সরকারের আইনজীবী ড্রিউ এনসাইন অবশ্য বিচারকের এই যুক্তির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। অন্যদিকে, বিচারক জাস্টিন ওয়াকার, যিনি ট্রাম্পের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ)-এর আইনজীবীর কাছে জানতে চান, কেন তারা টেক্সাসের পরিবর্তে ওয়াশিংটন ডিসিতে মামলা করেছেন।

আবেদনকারীরা বলছেন, এই বিতাড়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়নি। এমনকি, বিতাড়িত হওয়া অনেককে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি।

উদাহরণস্বরূপ, মার্চের ১৫ তারিখে বিতাড়িত হওয়া দুই শতাধিক ব্যক্তির মধ্যে অনেকে ভেনেজুয়েলার নাগরিক ছিলেন, যাদের এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়।

সেখানে তাদের মাথার চুল কামিয়ে একটি কঠোর নিরাপত্তা কেন্দ্রে বন্দী করে রাখা হয়। জানা গেছে, এই বন্দীদের কারাগারে রাখতে মার্কিন সরকার প্রায় ৬০ লক্ষ ডলার খরচ করেছে।

আরেকটি ঘটনায়, একজন ব্যক্তির আইনজীবী জানিয়েছেন, তার মক্কেলের শরীরে থাকা একটি ক্রাউন ট্যাটুকে গ্যাংয়ের চিহ্ন হিসেবে ভুলভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই ট্যাটু আসলে রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল দলের প্রতি তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ছিল।

তিনি একসময় পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন এবং শিশুদের একটি দলের প্রশিক্ষকও ছিলেন।

আদালতে শুনানির সময়, বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ, যিনি ১৫ মার্চ এক আদেশে ‘এলিযেন এনিমিজ অ্যাক্ট’-এর অধীনে সব ধরনের বিতাড়ন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই বিষয়টিও আলোচনায় আসে।

ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য বোয়াসবার্গের এই আদেশকে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করে এর বিরোধিতা করেছে।

মামলার শুনানিতে উঠে আসা বিষয়গুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি এবং নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

এই মামলার রায় আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনার বিষয় হতে পারে, কারণ এর মাধ্যমে অভিবাসন বিষয়ক মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বিষয়টি আরও একবার যাচাই করা হবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *