ভারতে মুসলিম ওয়াকফ সম্পত্তি: ১৪ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ কি লুঠ হচ্ছে?

ভারতে, মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত ওয়াকফ সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সম্প্রতি, মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের উজ্জয়িনী শহরে একটি ওয়াকফ জমির দখল নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ এবং ওয়াকফ আইন সংশোধনের প্রস্তাব এই বিতর্কের প্রধান কারণ।

উজ্জয়িনীতে একটি সরকারি প্রকল্পের জন্য কয়েক মাস আগে প্রায় আড়াইশো বাড়িঘর, দোকান এবং একটি পুরনো মসজিদের মতো স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়। স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের অভিযোগ, এই জমিটি ওয়াকফ বোর্ডের অধীন ছিল, যা মুসলিমদের ধর্মীয় ও জনহিতকর কাজে ব্যবহারের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছিল।

ওয়াকফ হলো ইসলামি আইনে প্রতিষ্ঠিত এক ধরনের ট্রাস্ট বা ইসলামিক অনুদান ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মালিকানায় থাকে না, বরং তা আল্লাহর নামে উৎসর্গিত হয়ে যায়।

এই ধরনের সম্পত্তি বিক্রি বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় না। ভারতে ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে থাকা জমির পরিমাণ প্রায় ৪ লক্ষ ৫ হাজার হেক্টর, যা দেশটির বিভিন্ন শহরে অবস্থিত।

এই প্রেক্ষাপটে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ওয়াকফ আইন ১৯৫৪-এর কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলোতে ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা কমানো এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর ইঙ্গিত রয়েছে।

সমালোচকরা মনে করছেন, এই পরিবর্তনের ফলে ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি, এর মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার খর্ব হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বর্তমানে ওয়াকফ সম্পত্তিগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে নানা ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। অনেক জায়গায় অবৈধ দখলদারিত্ব, কর্তৃপক্ষের গাফিলতি এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

পুরনো ভূমি রেকর্ড হালনাগাদ না করা এবং ডিজিটালকরণ প্রক্রিয়ায় ত্রুটির কারণেও অনেক সম্পত্তি চিহ্নিতকরণে সমস্যা হচ্ছে। মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের রাজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ ওয়াকফ সম্পত্তি হয় বেদখল হয়েছে, না হয় সেগুলোর বিষয়ে আদালতে মামলা চলছে।

উজ্জয়িনীর ঘটনাটি এই বিতর্কের একটি উদাহরণ। স্থানীয় প্রশাসন জানায়, ওই জমিটি একটি সরকারি প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন ছিল, তাই তা অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলেও, ওয়াকফ বোর্ড কর্তৃপক্ষের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ওয়াকফ আইন সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনা চলছে। বিরোধী দলগুলো মনে করে, এই আইন পরিবর্তনের ফলে ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়বে, যা সংখ্যালঘুদের অধিকারের পরিপন্থী।

তবে সরকার পক্ষের দাবি, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান সমস্যাগুলো দূর করা সম্ভব হবে।

বর্তমানে, ভারতের ওয়াকফ বোর্ডগুলো সরকারের সহায়তায় পরিচালিত হয়। ১৯৫৪ সালের ওয়াকফ আইনের পাশাপাশি, ১৯৯৫ এবং ২০১৩ সালে প্রণীত কিছু আইনে বোর্ডের ক্ষমতা বাড়ানো হয়।

কিন্তু নতুন সংশোধনীগুলো বাস্তবায়িত হলে ওয়াকফ সম্পত্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *