পুরুষদের মধ্যে দাড়ি প্রতিস্থাপনের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা: সুবিধা এবং ঝুঁকি।
পুরুষদের মুখভর্তি দাড়ির আকাঙ্ক্ষা নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে, দাড়ি পুরুষত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে, যা আত্মবিশ্বাস এবং ব্যক্তিত্বের সঙ্গে জড়িত।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, এই ধারণার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আধুনিক সৌন্দর্যচর্চা, যার ফলস্বরূপ দাড়ি প্রতিস্থাপনের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সারা বিশ্বে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে, এই পদ্ধতির জনপ্রিয়তা বাড়ছে, এবং এর কারণগুলো বহুবিধ।
দাড়ি প্রতিস্থাপন আসলে কী? এই পদ্ধতিতে, মাথার পেছন থেকে চুলের গোছা (follicular units) নিয়ে তা মুখের যে অংশে দাড়ি কম বা নেই, সেখানে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি অনেকটা হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্টের মতোই, তবে এখানে লক্ষ্য হল—মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা।
এই পদ্ধতির মূল আকর্ষণ হলো—দাড়ির ঘনত্ব বাড়ানো এবং মুখমণ্ডলের অবয়ব পরিবর্তন করা। অনেক পুরুষের কাছে, একটি ঘন দাড়ি তাদের আত্মবিশ্বাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বর্তমান ফ্যাশন এবং সামাজিক মাধ্যমে সুদর্শন দাড়ির ছবি দেখে অনেকে অনুপ্রাণিত হন এবং এই ধরনের রূপান্তর চান। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় যখন মানুষজন বাড়িতে বেশি সময় কাটিয়েছে, তখন এই বিষয়ে আগ্রহ আরও বাড়ে। অনলাইনে উপলব্ধ বিভিন্ন তথ্য এবং সেলিব্রিটিদের উদাহরণও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তবে, এই পদ্ধতির কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। দক্ষ ও অভিজ্ঞ সার্জন-এর অভাব, অস্ত্রোপচারের জটিলতা, এবং অপ্রত্যাশিত ফলাফলের সম্ভাবনা—এগুলো উদ্বেগের কারণ।
অস্ত্রোপচারের পর সংক্রমণ, ত্বকের সমস্যা, এবং স্বাভাবিক চেহারার অভাব হতে পারে। এছাড়াও, অনেক ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, অস্ত্রোপচারের ফল নিয়ে অসন্তুষ্ট হলে, হতাশা এবং আত্ম-অবিশ্বাস দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা সব সময় রোগীদের সতর্ক করেন। তারা পরামর্শ দেন, অস্ত্রোপচারের আগে চিকিৎসকের যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজখবর নিতে হবে। শুধুমাত্র কম খরচের কারণে অন্য দেশে গিয়ে এই ধরনের অস্ত্রোপচার করানো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ, সেখানে যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণের অভাব থাকতে পারে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে দাড়ি প্রতিস্থাপনের প্রবণতা সেভাবে দেখা না গেলেও, বিশ্বজুড়ে এর ক্রমবর্ধমান চাহিদা আমাদের দেশের মানুষের কাছেও একটি আলোচনার বিষয়। ভারতেও এর চাহিদা বাড়ছে।
যদি কেউ এই ধরনের অস্ত্রোপচারের কথা ভাবেন, তবে কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার।
- যোগ্যতাসম্পন্ন এবং অভিজ্ঞ সার্জন নির্বাচন করা।
- অস্ত্রোপচারের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা।
- বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা রাখা।
- অস্ত্রোপচারের পূর্বে এবং পরে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করা।
দাড়ি প্রতিস্থাপন একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। এটি একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, এবং এর ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে। তাই, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে সবকিছু বিবেচনা করা উচিত।
তথ্যসূত্র: The Guardian