যুদ্ধ-উত্তেজনা! ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া: ফের কি রক্তাক্ত সংঘাত?

শিরোনাম: ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া: যুদ্ধের আশঙ্কায় হর্ন অফ আফ্রিকায় উত্তেজনা

আফ্রিকার ‘হর্ন অফ আফ্রিকা’ অঞ্চলে, ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আবারও গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে কয়েক বছর আগেও সীমান্ত নিয়ে যুদ্ধ হয়েছে, এবং বর্তমানে তাদের মধ্যে উত্তেজনা নতুন করে বাড়ছে।

এর মূল কারণ হলো ইথিওপিয়ার লোহিত সাগরে প্রবেশাধিকার লাভের আকাঙ্ক্ষা। এই পরিস্থিতিতে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগের কারণ।

সম্প্রতি, ইরিত্রিয়া তাদের নাগরিকদের সামরিক বাহিনীতে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে, ইথিওপিয়াও তাদের সীমান্ত অঞ্চলে সেনা মোতায়েন করেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এমন পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাতের কারণ হতে পারে। ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ অবশ্য সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, লোহিত সাগরে প্রবেশাধিকারের জন্য তিনি ইরিত্রিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের সংঘাতে যেতে চান না।

তিনি শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধানে আগ্রহী। আবি আহমেদের মতে, লোহিত সাগরে প্রবেশাধিকার ইথিওপিয়ার জন্য একটি “অস্তিত্বের প্রশ্ন”।

তবে, ইরিত্রিয়ার অবস্থান বেশ কঠোর। তারা ইথিওপিয়ার সীমান্ত সংক্রান্ত পদক্ষেপকে “ভুল পথে চালিত” বলে অভিহিত করেছে।

এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বহু পুরোনো এবং তিক্ত। অতীতে সীমান্ত নিয়ে তাদের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত হয়েছে। ১৯৯৮ সালে উভয় দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ শুরু হয়, যা দুই বছর ধরে চলা এক ভয়াবহ যুদ্ধে রূপ নেয়।

এতে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি শান্তি চুক্তি হলেও, এর সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি।

২০১৮ সালে আবি আহমেদ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ইরিত্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। এর ফলস্বরূপ, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয় এবং সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়।

কিন্তু টাইগ্রে অঞ্চলে সংঘাতের কারণে সেই শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। টাইগ্রে অঞ্চলের পরিস্থিতিও উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।

টাইগ্রে অঞ্চলটি একসময় ইথিওপিয়ার গৃহযুদ্ধের কেন্দ্র ছিল। এই অঞ্চলের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইরিত্রিয়ার সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে বলে জানা যায়।

এর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

ইথিওপিয়ার লোহিত সাগরে প্রবেশাধিকারের আকাঙ্ক্ষা এই অঞ্চলের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইথিওপিয়া একটি স্থলবেষ্টিত দেশ, তাই তাদের সমুদ্রপথে বাণিজ্য করার জন্য অন্য দেশের বন্দরের উপর নির্ভর করতে হয়।

বর্তমানে তারা লোহিত সাগরের উপকূলবর্তী ইরিত্রিয়ার বন্দর ব্যবহারের চেষ্টা করছে। ইথিওপিয়ার এই পদক্ষেপকে ইরিত্রিয়া তাদের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখছে।

এছাড়াও, ইথিওপিয়ার সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ সোমালিয়ারও সম্পর্ক ভালো নয়। ইথিওপিয়া সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে একটি বন্দর চুক্তি স্বাক্ষর করায় সোমালিয়া তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য উভয় দেশকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে এখনই পদক্ষেপ না নিলে, ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরু হতে পারে। উভয় দেশের সরকারকেই সংযত হয়ে আলোচনার টেবিলে বসার কোনো বিকল্প নেই।

তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *