প্রকাশ্যে এলজিবিটিকিউ+ বিরোধীতা! শিল্পী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে, সংস্কৃতিচর্চার স্বাধীনতা এবং শিল্পী ও শিল্পের প্রতি সরকারি অনুদানের উপর একটি নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন, ন্যাশনাল এন্ডোমেন্ট ফর দ্য আর্টস (NEA) নামক একটি ফেডারেল সংস্থার মাধ্যমে, এমন কিছু নীতি তৈরি করে যা বিশেষভাবে LGBTQ+ বিষয়ক শিল্পকর্মের উপর প্রভাব ফেলে।

এই নীতির মূল লক্ষ্য ছিল “লিঙ্গ বিষয়ক মতাদর্শ”-এর প্রচারকে সীমিত করা, যা এখন শিল্পী এবং অধিকারকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (ACLU) এবং বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। তাদের মূল অভিযোগ হল, এই নতুন নিয়ম মুক্তভাবে মত প্রকাশের অধিকারের পরিপন্থী এবং এটি NEA-এর মূল উদ্দেশ্যের বিরোধী।

তাদের মতে, সরকার যদি কোনো বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে, তবে তা শিল্পকলার স্বাধীনতাকে খর্ব করে। এই মামলাটি মূলত শিল্পী ও শিল্পকর্মের উপর সরকারি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ।

এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে, NEA-এর অনুদান পাওয়ার জন্য আবেদনকারীদের একটি অঙ্গীকারনামা দিতে বলা হয়েছে, যেখানে তারা “লিঙ্গ বিষয়ক মতাদর্শ”-এর প্রচার করবে না বলে উল্লেখ করবেন। সমালোচকদের মতে, এই ধরনের শর্ত আরোপের ফলে শিল্পীরা তাদের কাজের স্বাধীনতা হারাতে পারেন।

বিশেষ করে, LGBTQ+ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত শিল্পকর্ম তৈরি করতে গিয়ে তাদের মধ্যে একটা ভীতি তৈরি হতে পারে।

“দ্য থিয়েটার অফেনসিভ”-এর নির্বাহী পরিচালক, গিসেল বাইরড এই বিষয়ে বলেন, “এটা একটি স্পষ্ট অবিচার। আমরা আগেও এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, এবং ভবিষ্যতেও করব। আমরা কোনোভাবেই ঘৃণা বা বিদ্বেষকে আমাদের মঞ্চ বা সাংস্কৃতিক স্থানগুলোতে জায়গা দিতে পারি না।”

গিসেল বাইরড

তিনি আরও যোগ করেন, এই ধরনের পদক্ষেপ আসলে শিল্পকলার কণ্ঠরোধ করার একটি প্রক্রিয়া। এই মামলার সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলো মনে করে, এই নতুন নিয়ম একদিকে যেমন সংবিধানের পরিপন্থী, তেমনই শিল্পকলার সৃজনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

কারণ, এর ফলে শিল্পীরা তাদের কাজ করতে দ্বিধা বোধ করতে পারেন। তাছাড়াও, এই নিয়মের কারণে, বিভিন্ন থিয়েটার এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে LGBTQ+ বিষয়ক বিষয়গুলি উপস্থাপিত হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

NEA-এর এই নতুন নীতির ফলে, রাইডার আইল্যান্ড ল্যাটিনো আর্টস (RILA) নামক একটি সংগঠন তাদের একটি প্রযোজনা সীমিত করতে বাধ্য হয়েছে, যেখানে তারা একজন নন-বাইনারি অভিনেতাকে যুক্ত করতে চেয়েছিল। এছাড়া, ন্যাশনাল কুইয়ার থিয়েটার (NQT)-এর মতো সংগঠনগুলিও তাদের ভবিষ্যৎ প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে।

আদালতে এই মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারিত হয়েছে, এবং মামলার রায় আসার আগে পর্যন্ত, NEA-এর এই বিতর্কিত নিয়মটি নিয়ে অনিশ্চয়তা বজায় রয়েছে। বিষয়টি শুধুমাত্র শিল্পী এবং শিল্পের স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে – সরকার কি শিল্পকলার উপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে?

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *