ফ্যাট বনাম তেল: স্বাস্থ্যকর রান্নার চাবিকাঠি?

ভোজ্য তেল নিয়ে বিতর্ক: স্বাস্থ্যকর ফ্যাট নিয়ে নতুন আলোচনা। বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের ব্যবহার একটি অতি পরিচিত বিষয়।

রান্নার অপরিহার্য উপাদান হিসেবে সয়াবিন তেল, পাম তেল-এর মতো বিভিন্ন ধরনের তেল আমাদের খাদ্য তালিকায় বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ভোজ্য তেলের স্বাস্থ্যকর দিকটি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে যেমন ভাজাভুজি খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে স্বাস্থ্য বিষয়ক উদ্বেগ। এই পরিস্থিতিতে, কোন ধরনের ফ্যাট বা তেল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে গবেষণা ও বিতর্ক।

এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে দুটি প্রধান বিষয়: পশুর ফ্যাট বা চর্বি (যেমন: গরুর “ট্যালো” বা মাংসের চর্বি) এবং উদ্ভিজ্জ তেল বা বীজ থেকে তৈরি হওয়া তেল (যেমন: সয়াবিন তেল, ক্যানোলা তেল ইত্যাদি)।

ঐতিহ্যগতভাবে, উন্নত বিশ্বে গরুর মাংসের চর্বি রান্নার কাজে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে হৃদরোগের সাথে প্রাণিজ ফ্যাট-এর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ার পরে, উদ্ভিজ্জ তেলের ব্যবহার বাড়ে।

এই তেলগুলো শিল্পকারখানায় ব্যবহারের পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হিসেবে বাজারজাত করা হতে থাকে।

সম্প্রতি, এই ধারণার পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্ভিজ্জ তেল প্রক্রিয়াকরণের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

তাদের মতে, গরুর মাংসের চর্বি বা “ট্যালো”-এর মতো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা ভালো।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র (Robert F. Kennedy Jr.), এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। তাঁর মতে, উদ্ভিজ্জ তেল “অতি-প্রক্রিয়াজাত” (ultraprocessed) খাবারের একটি অংশ, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার মূল কারণ।

তিনি খাদ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোকে গরুর মাংসের চর্বি-এর মতো ঐতিহ্যবাহী উপাদান ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করতে চাইছেন।

তবে, এই বিতর্কটি এত সরল নয়। পুষ্টিবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব ধরনের উদ্ভিজ্জ তেল খারাপ নয়।

জলপাই তেল (Olive oil) এবং অ্যাভোকাডো তেল-এর মতো কিছু তেল স্বাস্থ্যকর উপাদান সরবরাহ করে।

গরুর মাংসের চর্বি বা “ট্যালো” মূলত স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত ফ্যাট-এর একটি উৎস। এটি গরুর মাংস থেকে তৈরি করা হয়।

অন্যদিকে, উদ্ভিজ্জ তেলগুলি আসে বিভিন্ন উদ্ভিদের বীজ থেকে, যেমন সয়াবিন বা ক্যানোলা। এই তেল তৈরি করতে উচ্চ তাপ ও চাপে বীজগুলোকে নিষ্পেষণ করা হয়, এরপর হেক্সেন (hexane)-এর মতো রাসায়নিক দ্রবণ ব্যবহার করে তেল বের করা হয়।

এই প্রক্রিয়াগুলোতে তেলের গুণাগুণে পরিবর্তন আসতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত মাত্রায় ভাজা খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

ভোজ্য তেলের প্রকারভেদের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি কতটা তেল ব্যবহার করছেন এবং কীভাবে খাবার প্রস্তুত করছেন।

তাহলে, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট-এর ধারণা কী?

  • অসম্পৃক্ত ফ্যাট (Unsaturated Fat): জলপাই তেল, অ্যাভোকাডো তেল ইত্যাদি।
  • সম্পৃক্ত ফ্যাট (Saturated Fat): গরুর মাংসের চর্বি, মাখন ইত্যাদি।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের ফ্যাট-এর উপস্থিতি নিশ্চিত করা উচিত। সব ধরনের ফ্যাট-এর ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে।

অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে।

বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের ব্যবহার এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে, খাদ্য নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ভোজ্য তেল নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলা এবং খাদ্যাভ্যাসে বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *