নোর্ওয়ের দৌড়বিদ ইয়াকব ইনগেব্রিগটসেনের (Jakob Ingebrigtsen) জীবনের এক গভীর অধ্যায় এখন আদালতের কাঠগড়ায়। তাঁর বাবা এবং প্রাক্তন প্রশিক্ষক, গিয়ার্ট ইনগেব্রিগটসেনের (Gjert Ingebrigtsen) বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগের শুনানিতে দাঁড়িয়ে ইয়াকব তাঁর শৈশবের কিছু ভয়ঙ্কর স্মৃতি তুলে ধরেন।
প্যারিস অলিম্পিকে ৫০০০ মিটার এবং টোকিওতে ১৫০০ মিটারে স্বর্ণপদক জয়ী এই তারকার বয়ানে উঠে আসে ভয়, নিয়ন্ত্রণ আর গভীর উদ্বেগের এক সংস্কৃতি।
সোর-রোগাল্যান্ড জেলা আদালতে (Sør-Rogaland district court) দেওয়া সাক্ষ্যে ইয়াকব জানান, শৈশব থেকেই তিনি এক ভীতিকর পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন।
তাঁর কথায়, “আমার বেড়ে ওঠা ছিল ভয়ের ওপর ভিত্তি করে। আমি অনেক দিন ধরেই এই সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত ছিলাম। কৈশোরে এটা আমার কাছে খুবই পরিচিত একটা বিষয় ছিল, কারণ আমি মনে করতাম আমার কোনো স্বাধীনতা নেই, কোনো কিছুতে আমার বলার কিছু নেই।”
অভিযোগ অনুযায়ী, গিয়ার্ট ইনগেব্রিগটসেন তাঁর দুই সন্তানের ওপর, যাদের মধ্যে ইয়াকব ও তাঁর বোন ইনগ্রিডও (Ingrid) রয়েছেন, শারীরিক নির্যাতন করেছেন।
৫৯ বছর বয়সী গিয়ার্ট অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আগামী ১৬ই মে পর্যন্ত এই মামলার শুনানি চলবে এবং শোনা যাচ্ছে, আগামী সপ্তাহে গিয়ার্ট নিজেও আদালতে সাক্ষ্য দেবেন।
আদালতে ইয়াকব তাঁর জীবনের কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা দেন।
তিনি জানান, যখন তাঁর বয়স মাত্র আট বছর, স্কুলের একটি খারাপ রিপোর্টের কারণে বাবা তাঁকে মারধর করেছিলেন। ইয়াকব বলেন, “আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, আমি হয়তো বড় কোনো ভুল করে ফেলেছি, আর কী হতে চলেছে, সেই ভয়ে ছিলাম।”
শুধু তাই নয়, ইয়াকবের ব্যক্তিগত জীবনেও তাঁর বাবার হস্তক্ষেপ ছিল।
যখন ইয়াকব ১৬ বছর বয়সে এলিজাবেথ অ্যাসারসনের (Elisabeth Asserson) সঙ্গে পরিচিত হন, যিনি বর্তমানে তাঁর স্ত্রী, তখন তাঁর বাবা এই সম্পর্কটা ভালোভাবে নেননি।
তিনি চেয়েছিলেন, ইয়াকব যেন খেলাধুলা থেকে মনোযোগ না হারান। ইয়াকব জানান, “আমার বাবার মতো একজন মানুষ যখন এলিজাবেথকে নিয়ে এমন কথা বলতেন, তখন আমার খুব কষ্ট হতো, কারণ আমি তাঁকে (এলিজাবেথকে) ভালোবাসতাম।”
এই মামলার শুনানিতে ইয়াকবের দেওয়া সাক্ষ্য পারিবারিক সম্পর্ক এবং একজন সন্তানের প্রতি বাবার শাসনের গভীরতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
বিচার প্রক্রিয়া এখনো চলছে এবং গিয়ার্ট ইনগেব্রিগটসেন তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তথ্য সূত্র: The Guardian