গোপন চ্যাট: কেন এত গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যাল?

শিরোনাম: সিগন্যাল অ্যাপ: গোপনীয়তার চাদরে মোড়া যোগাযোগের দুনিয়া

বর্তমান ডিজিটাল যুগে, দ্রুত যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যাপের ব্যবহার বাড়ছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো সিগন্যাল (Signal)।

এটি একটি মেসেজিং অ্যাপ, যা ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে এই অ্যাপের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হওয়ায়, এর কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য নতুন করে সামনে এসেছে।

সিগন্যাল মূলত সরাসরি বার্তা আদান-প্রদান, গ্রুপ চ্যাট এবং ফোন ও ভিডিও কল করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই অ্যাপের মূল আকর্ষণ হলো এর “এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন” ব্যবস্থা।

এর মাধ্যমে, ব্যবহারকারীর বার্তাগুলো отправиত ও গ্রহণকারীর বাইরে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পড়া বা শোনা সম্ভব হয় না। সোজা কথায়, সিগন্যালে পাঠানো বার্তাগুলো এমনভাবে সাজানো থাকে যে, বার্তা গ্রহণকারী এবং যিনি পাঠাচ্ছেন, শুধুমাত্র তারাই এর পাঠোদ্ধার করতে পারেন।

অন্যান্য জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ, যেমন WhatsApp-ও এই এনক্রিপশন ব্যবহার করে। তবে, টেলিগ্রামের মতো কিছু অ্যাপে, ব্যবহারকারীকে এই এনক্রিপশন সক্রিয় করতে হয়। সিগন্যালে, এনক্রিপশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু থাকে।

সিগন্যাল অ্যাপে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এটিকে ব্যবহারকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে। এখানে, এক হাজার জন পর্যন্ত সদস্য নিয়ে গ্রুপ চ্যাট করা সম্ভব।

এছাড়াও, নির্দিষ্ট সময় পর বার্তাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যাওয়ার (Disappearing Messages) ব্যবস্থা রয়েছে।

তাহলে, এই অ্যাপটি কি সত্যিই নিরাপদ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রচলিত টেক্সট মেসেজিংয়ের চেয়ে সিগন্যাল অনেক বেশি নিরাপদ।

তবে, প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে হ্যাকিংয়ের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সরকারি কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের জন্য সিগন্যাল ব্যবহার করেন। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে, ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তারা এই অ্যাপ ব্যবহার করেছিলেন।

তবে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে, বাইডেন প্রশাসন তাদের কর্মকর্তাদের এই অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

গোপনীয়তা রক্ষার পাশাপাশি, সিগন্যালের মতো অ্যাপগুলো সরকারি তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

কারণ, বিশেষ সংরক্ষণ ব্যবস্থা ছাড়া, এই অ্যাপের বার্তাগুলো সাধারণত সরকারি তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় আসে না।

সিগন্যাল অ্যাপের যাত্রা শুরু হয়েছিল এক দশকেরও বেশি সময় আগে। এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন মক্সি মারলিনস্পাইক।

তিনি পরবর্তীতে একটি মোবাইল নিরাপত্তা স্টার্টআপ বিক্রি করে দেন। সিগন্যাল তৈরি করার জন্য, মারলিনস্পাইক দুটি ওপেন সোর্স অ্যাপ্লিকেশনকে একত্রিত করেন— একটি টেক্সট মেসেজিংয়ের জন্য এবং অন্যটি ভয়েস কলের জন্য।

বর্তমানে, সিগন্যাল ফাউন্ডেশন নামক একটি অলাভজনক সংস্থা এই অ্যাপের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই ফাউন্ডেশন বিজ্ঞাপন বা বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল নয়।

ব্যবহারকারীদের অনুদানই এর প্রধান উৎস। সিগন্যাল ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদে পাঁচজন সদস্য রয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ব্রায়ান অ্যাকটন, যিনি WhatsApp-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং এই ফাউন্ডেশনে ৫০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছেন।

গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে, সিগন্যালের মতো এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপগুলোর ব্যবহার ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে।

তবে, এর নিরাপত্তা এবং সরকারি যোগাযোগের ক্ষেত্রে এর প্রভাব নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *