পাসপোর্ট নিয়ে ট্রাম্পের নতুন ফতোয়া: বিপাকে রূপান্তরিত নারী-পুরুষ, প্রতিবাদে ফুঁসছে দেশ

যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট নীতিমালায় পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামছেন রূপান্তরকামী মার্কিনিরা।

নয়াদিল্লি (এপি) – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী রূপান্তরকামী (ট্রান্সজেন্ডার) ব্যক্তিরা তাদের লিঙ্গ পরিচয় সংক্রান্ত তথ্যের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের একটি নতুন নীতির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত হচ্ছেন। এই নীতি তাদের পাসপোর্ট এবং অন্যান্য সরকারি নথিতে তাদের প্রকৃত লিঙ্গ পরিচয়ের প্রতিফলনকে বাধাগ্রস্ত করছে।

এই পদক্ষেপের ফলে তারা হয়রানি, বৈষম্য এবং সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে আশঙ্কা করছেন।

এই মামলার মূল অভিযোগকারী হলেন অ্যাশ ল্যাজারাস অর। তিনি একজন রূপান্তরকামী ব্যক্তি এবং এই পরিবর্তনের কারণে তার জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তিনি জানান, নতুন পাসপোর্ট পেতে দেরি হওয়ার কারণে তিনি সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডে যেতে পারেননি, যেখানে তিনি লিঙ্গ-নিশ্চিতকরণ চিকিৎসার জন্য যাওয়ার কথা ছিল।

ট্রাম্পের এই নীতির কারণে, তার পরিচয় সংক্রান্ত কাগজপত্রে ভুল তথ্য দেখা যাচ্ছে, যা তার জন্য উদ্বেগের কারণ।

আদালতে দাখিল করা নথিপত্র অনুযায়ী, এই নীতি পরিবর্তনের ফলে পাসপোর্টগুলিতে ‘এক্স’ জেন্ডার মার্কার ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ‘এক্স’ মার্কার সাধারণত সেইসব ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহৃত হয়, যারা নিজেদের পুরুষ বা মহিলা – এই চিরাচরিত লিঙ্গ পরিচয়ের বাইরে মনে করেন।

এছাড়াও, এই নীতি পাসপোর্টে লিঙ্গ পরিবর্তনের আবেদনগুলিও স্থগিত করে দিয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) সাত জন ব্যক্তির পক্ষে মামলা দায়ের করেছে। এদের মধ্যে পাঁচজন রূপান্তরকামী এবং দুইজন ‘নন-বাইনারি’ (যাদের লিঙ্গ পরিচয় নারী বা পুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়)।

মামলার শুনানির জন্য তারা বোস্টন ফেডারেল আদালতে একটি প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেছেন, যার মাধ্যমে এই নীতিকে আপাতত স্থগিত করার চেষ্টা করা হবে।

এসিএলইউ-এর আইনজীবী শ্রুতি স্বামীনাথন জানিয়েছেন, “সবারই সঠিক পরিচয়পত্র পাওয়ার অধিকার আছে। এই নীতি রূপান্তরকামী আমেরিকানদের প্রতি হয়রানি, বৈষম্য এবং সহিংসতার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে, কারণ তারা এখন তাদের প্রকৃত পরিচয় বহনকারী পাসপোর্ট তৈরি বা নবায়ন করতে পারছেন না।”

অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন তাদের যুক্তিতে বলেছে যে, এই পাসপোর্ট নীতি পরিবর্তনের ফলে সংবিধানের সমান অধিকারের কোনও লঙ্ঘন হয়নি।

তারা আরও দাবি করেছে যে পাসপোর্ট নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে এবং এই নীতির কারণে বাদীপক্ষের কোনো ক্ষতি হবে না, কারণ তারা এখনও বিদেশ ভ্রমণ করতে পারেন।

এই মামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা তাদের পাসপোর্ট এবং অন্যান্য পরিচয়পত্রে ভুল লিঙ্গ-সংক্রান্ত তথ্য থাকার কারণে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে তারা বৈষম্য এবং সহিংসতার শিকার হতে পারেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র পাসপোর্ট নীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।

এর আগে, প্রশাসন রূপান্তরকামী ব্যক্তিদের অধিকার এবং স্বীকৃতির বিরুদ্ধে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সামরিক বাহিনীতে তাদের অংশগ্রহণে বাধা এবং সরকারি অর্থায়নে তাদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করা।

এই মামলার রায় ভবিষ্যতে রূপান্তরকামী ব্যক্তিদের অধিকার এবং তাদের জীবনযাত্রার উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *