গ্রিনল্যান্ডে মার্কিন প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্তে ডেনমার্কের তীব্র আপত্তি।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন গ্রিনল্যান্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি এই পদক্ষেপকে ‘অগ্রহণযোগ্য চাপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অঙ্গীকার করেছেন।
জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় নারী উশা ভ্যান্সের নেতৃত্বে এই প্রতিনিধি দল গ্রিনল্যান্ডে সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
আর্কটিক অঞ্চলের এই দ্বীপটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশাল বরফের চাদরে ঢাকা গ্রিনল্যান্ডে প্রচুর খনিজ সম্পদ মজুত রয়েছে। এর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এই দ্বীপের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে।
ডেনমার্কের অধীনে থাকা স্ব-শাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের এই সফর নিয়ে কোপেনহেগেন ও নুকের মধ্যে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা।
মার্কিন প্রতিনিধি দলে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং জ্বালানি সচিব ক্রিস রাইটও থাকছেন।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী ফ্রেডেরিকসেন এই সফরকে গ্রিনল্যান্ড এবং ডেনমার্কের উপর ‘অগ্রহণযোগ্য চাপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ডেনমার্ক এই চাপ প্রতিরোধ করবে।
ডেনিশ টেলিভিশন চ্যানেল টিভি ২-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই কথা বলেন।
ফ্রেডেরিকসেন আরও বলেন, এই সফরকে কোনো ব্যক্তিগত সফর হিসেবেও দেখা যায় না, কারণ অন্য একটি দেশের সরকারি প্রতিনিধিদের নিয়ে ব্যক্তিগত সফর হতে পারে না।
তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের ইচ্ছার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
ফ্রেডেরিকসেন বলেন, ট্রাম্পের এই ধরনের পদক্ষেপকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।
গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুটে বোরুপ এগেদেও যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি গ্রিনল্যান্ডে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেখানে নতুন সরকার গঠনের আলোচনা চলছে।
এমতাবস্থায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সফরকে ভালোভাবে দেখছেন না গ্রিনল্যান্ডের নেতারা।
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, গ্রিনল্যান্ডের কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণে তারা সেখানে যাচ্ছেন।
তবে, গ্রিনল্যান্ড সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা কোনো আনুষ্ঠানিক বা ব্যক্তিগত সফরের জন্য কোনো আমন্ত্রণ জানায়নি।
তারা বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে রয়েছে এবং নতুন জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
তাই তারা অন্যান্য দেশগুলোকে এই প্রক্রিয়াকে সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা গ্রিনল্যান্ডের উত্তরে অবস্থিত একটি মার্কিন বিমানঘাঁটি পরিদর্শন করবেন এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলোতেও যাবেন বলে জানা গেছে।
তাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও স্থানীয়দের সম্পর্কে জানারও কথা রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গ্রিনল্যান্ডের ভবিষ্যৎ এবং সেখানকার খনিজ সম্পদের উপর যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণেই এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ছোট একটি দেশ হিসেবে গ্রিনল্যান্ড, বৃহৎ শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।
এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ভূ-রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান