পাকিস্তান: মজাদার বিরিয়ানি, চাটনি ও সেমাইয়ের গোপন রেসিপি!

“পাকিস্তান” রান্নার বই: ঈদ-এর জন্য মুখরোচক কিছু পদ। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সংস্কৃতি ও খাবারের একটি বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে।

এইবার, “পাকিস্তান” নামক একটি রান্নার বই আমাদের সামনে এসেছে, যা পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী কিছু রান্নার রেসিপি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। বইটির লেখিকা মেরিয়াম জিলানি, যিনি এই বইটির মাধ্যমে পাকিস্তানের রন্ধনশৈলীকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন।

এই বইটিতে ঈদ-এর মত উৎসবে পরিবেশন করার মত কিছু বিশেষ পদের রেসিপি রয়েছে। আসুন, তেমনই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

প্রথমেই আসা যাক মাটন পোলাও-এর কথায়। পোলাও বাঙালির খুবই পছন্দের একটি খাবার, আর এই মাটন পোলাও-এর রেসিপিটি ঈদ-এর দিনে পরিবেশন করার জন্য মেরিয়ামের ঠাকুরমার বাড়িতে বিশেষভাবে রান্না করা হতো।

এটি একটি সুস্বাদু এবং সুগন্ধিযুক্ত পদ, যা গরম মশলার সাথে মাংসের একটি অসাধারণ মিশ্রণ।

**উপকরণ:**

  • প্রায় ১.৩৬ কেজি (৩ পাউন্ড) হাড়সহ খাসির মাংস, ১ থেকে ১.৫ ইঞ্চি আকারে কাটা
  • ৪টি মাঝারি আকারের পেঁয়াজ, পাতলা করে কাটা
  • ৪টি লবঙ্গ
  • ২টি বড় এলাচ
  • ১টি ২-ইঞ্চি দারুচিনি স্টিক
  • ১ টেবিল চামচ জিরা
  • ২ টেবিল চামচ রসুন বাটা
  • স্বাদমতো লবণ (প্রায় ২ টেবিল চামচ)
  • ১/৩ কাপ ভেজিটেবল তেল
  • ৩ কাপ বাসমতি চাল, ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া

**প্রস্তুত প্রণালী:**

  1. একটি বড় পাত্রে ৮ থেকে ১০ কাপ জল নিন। মাংস, অর্ধেক পেঁয়াজ, লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি, জিরা, ১ টেবিল চামচ রসুন বাটা এবং ১ টেবিল চামচ লবণ যোগ করুন। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। উচ্চ আঁচে ফুটিয়ে নিন, তারপর অল্প আঁচে ১ থেকে ২ ঘণ্টা রান্না করুন, যতক্ষণ না মাংস নরম হয়। মাংস তুলে নিন এবং জল ছেঁকে নিন।
  2. একটি পরিষ্কার পাত্রে তেল গরম করুন। বাকি পেঁয়াজ সোনালী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। খেয়াল রাখবেন পুড়ে না যায়। বাকি রসুন বাটা দিয়ে আরও ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ভাজুন।
  3. আঁচ বাড়িয়ে মাংস এবং বাকি লবণ দিন। মাংস সোনালী হওয়া পর্যন্ত ৫-৭ মিনিট ভাজুন। ৬ কাপ মাংসের জল দিন। স্বাদমতো লবণ দিন। ফুটে উঠলে, চাল দিন এবং ১০ মিনিট রান্না করুন, যতক্ষণ না জল শুকিয়ে যায়।
  4. ঢাকনাটি একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন এবং ভালোভাবে আটকে দিন। একেবারে কম আঁচে অন্তত ১০-১২ মিনিট ভাপ দিন, যতক্ষণ না চাল নরম ও ঝরঝরে হয়। পরিবেশন করার আগে ভালোভাবে নেড়ে নিন।

এরপর আসা যাক “লাহসান কি চাটনি” বা রসুন চাটনির কথায়। এই চাটনিটি তৈরি করেছেন একজন ব্রিটিশ-পাকিস্তানি উদ্যোক্তা ও শেফ, আইদা খান। এটি তার মায়ের রেসিপি, যা খুবই জনপ্রিয়।

ঝাল স্বাদের এই চাটনি অল্প খেলেই স্বাদ পাওয়া যায়।

**উপকরণ:**

  • ৪টি রসুনের বড় কোয়া, আলাদা করে খোসা ছাড়ানো
  • দেড়টি ছোট লাল পেঁয়াজ, কুচি করা
  • ১/৪ কাপ শুকনো লাল মরিচের ফ্লেক্স
  • ১টি বার্ডস আই চিলি (ইচ্ছা অনুযায়ী)
  • ১/২ কাপ ভেজিটেবল তেল
  • ১ চা চামচ লবণ, স্বাদমতো
  • ২ চা চামচ লেবুর রস

**প্রস্তুত প্রণালী:**

  1. একটি ফুড প্রসেসরে রসুন, পেঁয়াজ, মরিচের ফ্লেক্স এবং বার্ডস আই চিলি (যদি ব্যবহার করেন) মিশিয়ে নিন এবং একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন।
  2. একটি ছোট সসপ্যানে তেল গরম করুন। রসুন এবং পেঁয়াজের পেস্ট ও লবণ দিন। অল্প আঁচে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট রান্না করুন, মাঝে মাঝে নাড়াচাড়া করুন, যতক্ষণ না রসুন ও পেঁয়াজ ক্যারামেল হয়ে যায় এবং চাটনির রঙ গাঢ় হয়।
  3. চুলা থেকে নামিয়ে লেবুর রস মিশিয়ে পরিবেশন করুন।

সবশেষে মিষ্টিমুখ করার জন্য “সেভিয়ান”। ঈদ-এর দিনে এই মিষ্টিমুখ করা একটি বিশেষ রীতি।

এটি দুধ ও মশলার সাথে ভাজা সেমাই দিয়ে তৈরি করা হয়।

**উপকরণ:**

  • ১/৪ কাপ ঘি
  • ৬টি সবুজ এলাচ, ফাটিয়ে নিন
  • ৫.৫ আউন্স সেভিয়ান (সুজি সেমাই)
  • ৮.৫ কাপ ফুল ফ্যাট দুধ
  • ৩/৪ কাপ চিনি
  • ২ টেবিল চামচ কাঠবাদাম কুচি

**প্রস্তুত প্রণালী:**

  1. একটি ভারী পাত্রে ঘি গরম করুন। এলাচ দিয়ে ৩০ সেকেন্ড ভাজুন। সেভিয়ান দিন এবং ২-৩ মিনিট সোনালী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। ধীরে ধীরে দুধ ঢালুন এবং ফুটিয়ে নিন। চিনি যোগ করুন এবং নাড়াচাড়া করুন। মাঝারি আঁচে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রান্না করুন, যতক্ষণ না দুধ ঘন হয়ে আসে এবং সেভিয়ানের হালকা কামড় থাকে।
  2. একটি পরিবেশন পাত্রে সেভিয়ান নিন। কাঠবাদাম কুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন। ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন।

“পাকিস্তান” রান্নার বইটি সত্যিই একটি অসাধারণ সংগ্রহ, যেখানে পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের রান্নার রেসিপি রয়েছে।

এই বইয়ের রেসিপিগুলো অনুসরণ করে, আপনিও আপনার পরিবারের জন্য তৈরি করতে পারেন মুখরোচক সব খাবার।

তথ্য সূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *