ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা হামদান বাল্লালকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। ‘নো আদার ল্যান্ড’ নামক অস্কারজয়ী প্রামাণ্যচিত্রের সহ-পরিচালক বাল্লালকে সম্প্রতি অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা আক্রমণ করার পর আটক করা হয়েছিল।
মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর সহ-পরিচালক ইউভাল আব্রাহাম জানান, সারা রাত হাতকড়া পরিয়ে সেনা ঘাঁটিতে মারধরের পর হামদান বাল্লালকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং তিনি পরিবারের কাছে ফিরছেন।
সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, বাল্লালসহ আরও দুজন ফিলিস্তিনিকে কিরিয়াত আরবা’র পুলিশ স্টেশন থেকে বের হতে দেখেছেন।
বাল্লালের মুখে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং তাঁর পোশাকে রক্তের দাগ লেগে ছিল।
হামদান বাল্লাল এপিকে জানান, তাঁকে একটি সেনা ঘাঁটিতে আটকে রাখা হয়েছিল এবং সেখানকার তীব্র ঠান্ডায় একটি ঘরে তাঁকে ঘুমাতে বাধ্য করা হয়। বাল্লাল বলেন, “আমাকে ২৪ ঘণ্টা চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। সারা রাত আমি ঠান্ডায় জমে গিয়েছিলাম। আমি কিছুই দেখতে পারছিলাম না… আমি সৈন্যদের হাসির শব্দ শুনছিলাম।”
আটককৃতদের আইনজীবী লিয়া সেমেল জানিয়েছেন, তাঁদের আঘাতের জন্য সামান্য চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং আটকের পর কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত তিনি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। এর আগে তিনি জানান, তাঁদের বিরুদ্ধে এক তরুণ বসতি স্থাপনকারীর ওপর পাথর ছোড়ার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা তাঁরা অস্বীকার করেছেন।
উল্লেখ্য, ‘নো আদার ল্যান্ড’ চলচ্চিত্রটি ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অধীনে বসবাস করা ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেছে।
এই মাসের শুরুতে লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত ৯৭তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার জেতার পর ছবিটির পরিচালক ও কলাকুশলীরা মঞ্চে উঠেছিলেন।
সোমবার রাতে, পবিত্র রমজান মাসে ফিলিস্তিনিরা যখন সূর্যাস্তের পর ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন প্রায় দুই ডজন বসতি স্থাপনকারী— যাদের মধ্যে কেউ মুখোশ পরে, কেউ অস্ত্র নিয়ে এবং কেউ সামরিক পোশাকে সজ্জিত হয়ে— পশ্চিম তীরের সুসিয়া গ্রামে হামলা চালায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা এপিকে জানান, সেনারা এসে ফিলিস্তিনিদের দিকে বন্দুক তাক করে এবং বসতি স্থাপনকারীরা পাথর ছুড়তে থাকে।
পরিচালক হামদান বাল্লালের স্ত্রী লামিয়া বাল্লাল জানান, তিনি তাঁদের বাড়ির ভেতরে তিন সন্তানকে নিয়ে লুকিয়ে ছিলেন, তখন বাইরে তাঁর স্বামীকে মারধর করা হচ্ছিল।
তিনি স্বামীর চিৎকার শোনেন, “আমি মরে যাচ্ছি!” এবং অ্যাম্বুলেন্স ডাকার আকুতিও শোনেন। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে তিনি দেখেন, তিনজন ইউনিফর্ম পরা লোক রাইফেল দিয়ে বাল্লালকে মারধর করছে এবং আরও একজন বেসামরিক লোক সেই দৃশ্য ভিডিও করছিল।
লামিয়া বলেন, “অবশ্যই, অস্কার জয়ের পর তারা আমাদের ওপর আরও বেশি আক্রমণ করতে এসেছে। আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম।
হামদান বাল্লাল জানিয়েছেন, পরিচিত এক বসতি স্থাপনকারী তাঁকে আক্রমণ করেছে, যে অতীতেও তাঁকে হুমকি দিয়েছিল।
আগস্ট মাসের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ওই বসতি স্থাপনকারী অন্যান্য মুখোশধারীর সঙ্গে বাল্লালকে হুমকি দিচ্ছে।
ভিডিওতে ওই বসতি স্থাপনকারীকে বলতে শোনা যায়, “এটা আমার ভূমি, ঈশ্বর আমাকে দিয়েছেন।
এরপর সে অশ্লীল ভাষায় কথা বলে এবং বাল্লালের সঙ্গে মারামারির চেষ্টা করে। ভিডিওতে সে আরও বলে, “পরের বার ভালো হবে না।”
মঙ্গলবার বাল্লালের বাড়ির বাইরে সামান্য রক্তের দাগ দেখা গেছে এবং তাঁর গাড়ির উইন্ডশীল্ড ও জানালা ভাঙা অবস্থায় ছিল।
প্রতিবেশীরা একটি পানির ট্যাঙ্কের দিকে ইঙ্গিত করে জানান, বসতি স্থাপনকারীরা সেটিতেও আঘাত করেছে।
চলচ্চিত্রটির আরেক সহ-পরিচালক, বাসেল আদ্রা, যিনি ওই এলাকার একজন বিশিষ্ট ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মী, জানিয়েছেন, অস্কার জয়ের পর থেকে বসতি স্থাপনকারী এবং ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ব্যাপক হারে বেড়েছে।
তিনি বলেন, “এখানে গণহত্যার মতো ঘটনা চলছে, কেউ তা থামাতে পারছে না এবং সেনারা কেবল এসব আক্রমণে সহায়তা করছে।
আমরা এখানে, গাজায় এবং পুরো পশ্চিম তীরে— এক কঠিন সময় পার করছি… কেউ এটা বন্ধ করছে না।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সোমবার জানায়, তারা তিনজন ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে, যাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পাথর নিক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও, একটি সহিংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তারা একজন ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিককেও আটক করেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা