মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ফাঁস হওয়া গোপন কথোপকথন এখন আলোচনার বিষয়। এই কথোপকথনে ইউরোপের প্রতি তাদের কঠোর মনোভাবের চিত্র উঠে এসেছে, যা তাদের প্রকাশ্য বক্তব্যের থেকেও অনেক বেশি তীব্র ছিল।
জানা গেছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভেন্স, প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ইউরোপের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, ইউরোপীয় দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল।
এমনকি তারা একটি সামরিক অভিযান বন্ধ করার বিষয়েও আলোচনা করেন, কারণ তাদের ধারণা ছিল, এটি আমেরিকার চেয়ে ইউরোপের অর্থনীতিকে বেশি সহায়তা করবে। এই আলোচনার মূল বিষয় ছিল, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ এবং সুয়েজ খালের গুরুত্ব।
উল্লেখ থাকে, বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতির জন্য সুয়েজ খাল একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ।
ফাঁস হওয়া কথোপকথনে ভেন্স মন্তব্য করেন, “আমি মনে করি আমরা ভুল করছি। যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ৩ শতাংশ বাণিজ্য সুয়েজ খাল দিয়ে যায়, যেখানে ইউরোপের ৪০ শতাংশ বাণিজ্য এই পথ ব্যবহার করে।
আলোচনায় হেগসেথও ইউরোপের উপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি ভেন্সের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, “ইউরোপীয় দেশগুলোর এই সুযোগসন্ধানী মনোভাবে আমি হতাশ।
কথোপকথনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজও যোগ দেন এবং প্রস্তাব করেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছ থেকে সামরিক অভিযানের খরচ আদায় করা যেতে পারে।
এই কথোপকথন ট্রাম্প প্রশাসনের সেই কঠোর মনোভাবের প্রতিচ্ছবি, যা তারা দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপের প্রতি দেখিয়ে আসছে। বিশেষ করে ন্যাটোতে (NATO) সদস্য দেশগুলোর আর্থিক অবদান এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইউরোপের ভূমিকা নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়।
বিভিন্ন সময়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইউরোপের দুর্বলতা নিয়ে কথা বলেছেন। তাদের মতে, ইউরোপ বর্তমানে দুর্বল এবং অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল।
ফাঁস হওয়া এই কথোপকথন ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, যুক্তরাজ্যের মতো দেশ, যারা ইতোমধ্যে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে এই ঘটনায় বিরক্তি দেখা দিয়েছে।
বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গাই ভারহফস্টাড এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, “ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার এটাই উপযুক্ত সময়।
এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা শুধু কথার কথা বলেননি, বরং ইউরোপের উপর তাদের অসন্তুষ্টির গভীরতা অনেক বেশি। এই ধরনের মন্তব্যগুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন