ট্রাম্পের সাহায্য বন্ধ: মেক্সিকোতে এলজিবিটিকিউ+ অভিবাসীদের আশ্রয়!

মেক্সিকোর একটি আশ্রয়কেন্দ্র, যেখানে এলজিবিটিকিউ+ (LGBTQ+) অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়া হয়, মার্কিন সাহায্য কমানোর ফলে কিভাবে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, সেই নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)। উদ্বাস্তু এবং আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরি করা এবং তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা কতটা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেই চিত্রটি এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর তাপাচুলা-য় (Tapachula) কিউবা থেকে আসা আনা এস্কিভেল-এর (Ana Esquivel) মতো অনেক এলজিবিটিকিউ+ অভিবাসী, নিজেদের জীবন বাঁচানোর তাগিদে দেশ ছেড়েছেন। তারা তাদের লিঙ্গ পরিচয় এবং যৌন অভিমুখিতার কারণে নিজ দেশে বৈষম্য ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

আনা জানান, “আমার এখনও মনে আছে, যখনই কোনো পুলিশ অফিসারকে দেখতাম, বুকটা ধড়ফড় করে উঠত। কারণ, দেশে আমাদের পরিচয়পত্রে পুরুষ নাম থাকলে, অনেক সময়ই পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হতো।

এই শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ‘কাসা ফ্রিদা’ (Casa Frida) নামের একটি আশ্রয়কেন্দ্র। এটি এলজিবিটিকিউ+ অভিবাসীদের আশ্রয়, খাদ্য এবং আইনি সহায়তা প্রদান করে।

কিন্তু প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিদেশি সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ায়, এই আশ্রয়কেন্দ্রটি তাদের তহবিলের ৬০ শতাংশ হারিয়েছে। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া উদ্বাস্তুদের সাহায্য করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

কাসা ফ্রিদার কর্মী সেবাস্তিয়ান রদ্রিগেজ (Sebastián Rodríguez) জানান, “সহায়তা চেয়ে আসা প্রায় সবাই সহিংসতার শিকার। তাদের ফিরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।”

আশ্রয়কেন্দ্রে আসা অভিবাসীদের অনেকেই জানান, মেক্সিকোতে প্রবেশের পরেই তারা বিভিন্ন কার্টেল সদস্যদের দ্বারা অপহৃত হয়েছিলেন। মুক্তি পেতে তাদের অনেক মূল্যবান জিনিস দিতে হয়েছে।

রদ্রিগেজ আরও বলেন, “এলজিবিটিকিউ+ ব্যক্তিরা আরও বেশি সহিংসতার শিকার হন। অনেক ট্রান্সজেন্ডার নারী, পুরুষের ছদ্মবেশে থাকেন, যাতে করে অপরাধীদের চোখে না পড়েন।”

আশ্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে প্রায় ২০০ জন এলজিবিটিকিউ+ ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হয়। তবে সাহায্য কমে যাওয়ায়, এখন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।

আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিরা ইংরেজি শেখার সুযোগ পান এবং তাদের মেক্সিকোতে বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি পরামর্শ দেওয়া হয়।

কাসা ফ্রিদা-র কর্মীরা জানান, তাদের মূল লক্ষ্য হল সহিংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সমাজে পুনর্বাসন করা।

আশ্রয়কেন্দ্রটি তিনটি স্থানে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। মেক্সিকো সিটিতে এর সদর দপ্তর, যেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তা করা হয়।

তাপাচুলা-য় কিউবা, হন্ডুরাস, ভেনেজুয়েলা, এল সালভাদর, পেরু এবং হাইতি থেকে আসা অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়া হয়।

এছাড়া, গুরুতর ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য একটি গোপন স্থানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়।

আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে ২১ বছর বয়সী ম্যানুয়েল জিমেনেজ-এর (Manuel Jiménez) কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

পরিবার থেকে নিগ্রহের শিকার হয়ে তিনি মেক্সিকো সিটিতে আসেন এবং কাসা ফ্রিদাতে আশ্রয় নেন।

জিমেনেজ-এর মতো আরও অনেকে, উন্নত জীবনের আশায় সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।

আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া আনা এস্কিভেল-এর মতে, তিনি এখন মেক্সিকোর নাগরিক হতে চান।

তিনি বলেন, “আমি এখানে থাকতে চাই এবং এই দেশের অংশ হতে চাই।

কাসা ফ্রিদার সহায়তায় তিনি নতুন করে জীবন শুরু করতে চান।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *